ছ’মাস পর পাঁচ রাজ্যে ভোট! বাংলায় নজর বিজেপির, জোটে ভরসা তামিলনাড়ুতে

Next round of elections in 6 months — Bengal, Tamil Nadu, Assam, Kerala & Puducherry

কলকাতা: বিহার বিধানসভায় ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ৷ এখন সবার গণনার ফলাফলে দিতে৷ তবে দেশের রাজনীতিতে ফের উত্তপ্ত হতে চলেছে নির্বাচনী আবহ (Elections 2026)। আগামী ছয় মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন — পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, অসম, কেরালা ও পুদুচেরি। এই রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিক লড়াই শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির ভারসাম্য নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Advertisements

এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে অসম ও পুদুচেরিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায়, ফলে দলটির প্রথম লক্ষ্য—এই দুই রাজ্য পুনরায় দখলে রাখা। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নিজেদের সংগঠন ও প্রভাব আরও বাড়াতে মরিয়া, যেখানে ২০২১ সালের নির্বাচনে তারা ইতিহাস তৈরি করলেও ক্ষমতার দরজায় পৌঁছতে পারেনি।

   

🗳️ বিজেপির মূল লক্ষ্য: ‘রিটেন + রাইজ’ স্ট্র্যাটেজি

দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, এবারের নির্বাচনী কৌশল হবে “Retain and Rise”—অর্থাৎ যেখানে ক্ষমতা আছে, তা ধরে রাখা (অসম ও পুদুচেরি), এবং যেখানে নেই, সেখানে ভোট শেয়ার বাড়ানো (বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে)।

অসম:

হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে বিজেপি শাসন টিকিয়ে রেখেছে, তবে এনআরসি ও অভিবাসন ইস্যু আবারও আলোচনায় আসছে। দল এখন উন্নয়ন, অবকাঠামো ও ধর্মীয় মেরুকরণ—এই তিন ইস্যুকে সমান গুরুত্ব দিতে চাইছে।

পুদুচেরি:

এখানে বিজেপি ও অন্নদিএমকে–র যৌথ শাসন রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের এই ছোট কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দলীয় জনসংযোগ ও তামিল প্রভাবকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি।

🌾 পশ্চিমবঙ্গ: লড়াই মর্যাদার, লক্ষ্য তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ২০২১ সালে ৭৭টি আসনে জয় পেয়েছিল—যা দলীয় ইতিহাসে নজিরবিহীন। কিন্তু এরপর দল সাংগঠনিক বিভাজন, নেতৃত্ব সংকট এবং জনসংযোগে দুর্বলতা অনুভব করেছে। এবার কেন্দ্র থেকে রাজ্য নেতৃত্ব পর্যন্ত লক্ষ্য একটাই—‘Comeback Bengal’।

দল সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ব্যক্তিগতভাবে রাজ্যের রাজনৈতিক প্রস্তুতি তদারকি করছেন। সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারীর দিল্লি সফর এবং অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর বৈঠক সেই প্রক্রিয়ারই ইঙ্গিত।

রাজ্যে বিজেপি এবার বুথভিত্তিক কমিটি পুনর্গঠন, সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকের সঙ্গে সংলাপ, এবং যুব ও মহিলাদের মধ্যে প্রভাব বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছে।

Advertisements

🤝 তামিলনাড়ু: জোটই একমাত্র রাস্তা

তামিলনাড়ু বিজেপির জন্য বরাবরই চ্যালেঞ্জিং ভূমি। তবে দিল্লির কৌশলবিদরা জানাচ্ছেন, এখানেও “Bihar Model Alliance” প্রয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। অর্থাৎ স্থানীয় আঞ্চলিক দলের সঙ্গে শক্তিশালী জোট গঠন করে ভোটের ভারসাম্য তৈরি করা।

বর্তমানে রাজ্যে ডিএমকে ক্ষমতায় থাকলেও বিজেপি আশা করছে—এআইএডিএমকে, পিএমকে বা ছোট ছোট আঞ্চলিক দলের সঙ্গে হাত মেলালে ভোটে উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

🌿 কেরালা: কংগ্রেস-বাম দ্বৈরথে নীরব প্রস্তুতি

কেরালায় বিজেপি এখনো তৃতীয় শক্তি হিসেবে রয়ে গেছে, কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যে সংগঠন মজবুত করতে বড় পরিকল্পনা নিচ্ছে। দক্ষিণ ভারতে সম্প্রতি অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানায় ভোটে উন্নত পারফরম্যান্সের পর কেরালায়ও অন্তত ২০ শতাংশ ভোটশেয়ার অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে দল।

🧭 তৃণমূল, কংগ্রেস ও আঞ্চলিক ফ্রন্ট

অন্যদিকে বিরোধী শিবিরেও নতুন জোট-রাজনীতি শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে, কংগ্রেস দক্ষিণ ভারতে তার পুরনো প্রভাব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, আর বামফ্রন্ট অসম ও কেরালায় প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখার লড়াই করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২6-এর এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন হবে ভারতের পরবর্তী রাজনৈতিক ব্যালান্স নির্ধারণকারী ভোট

🗣️ বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন,

“বিজেপি এখন রাজ্যভিত্তিক ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে। অসমে হিন্দুত্ব ও উন্নয়ন, বাংলায় সংগঠন ও চিত্র বদল, তামিলনাড়ুতে জোট রাজনীতি—এটাই দলীয় ব্যালান্স।”

অন্যদিকে দিল্লির নীতিনির্ধারকদের মতে, আগামী ছয় মাস দেশের জন্য হবে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়—যেখানে আঞ্চলিক ফলাফল সরাসরি জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ গঠন করতে পারে।