নয়াদিল্লি: এক সময় যেসব অঞ্চল রক্তাক্ত হতো মাওবাদী হামলায়, আজ সেই দেশই প্রায় সম্পূর্ণভাবে হিংসা-মুক্ত হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার INS বিক্রান্তে একটি বক্তৃতায় ঘোষণা করেন “ভারত মাওবাদী হিংসা থেকে মুক্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই স্বাধীনতার কড়া নাড়া আমরা শুনতে পাচ্ছি।” গত এক সপ্তাহে দেশে প্রায় ৩০০ র বেশি নকশাল এবং মাওবাদী প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
এমনকি কিষেণজির ভাই তিনি নিজেও বন্দুক ছেড়ে মূল স্রোতে এসে বাঁচতে চেয়েছেন। তবে রাজনৈতিক সমালোচকদের মতে মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ ভাবে কূটনৈতিক। অনেকে আবার মনে করছেন দেশ থেকে বামপন্থা চিরতরে বিলীন করতেই মোদী সরকারের এই উদ্যোগ।
RJD-এর ভোটযুদ্ধে প্রস্তুতি, ১৪৩ সিটে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ
মোদী বলেছেন দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের ফলেই এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, “এক সময় ১২৫টি জেলা মাওবাদী সন্ত্রাসের কবলে ছিল। এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ১১-তে।” প্রধানমন্ত্রী জানান, মাওবাদী হিংসার বিরুদ্ধে এই লড়াই দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির একটি।
তিনি তার বক্তৃতায় যোগ করেন “আমাদের পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সাহসিকতাই আজ ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। তারা কেবল বন্দুক নয়, মানবিকতার অস্ত্র নিয়েও লড়েছে,” বলেন মোদী। তিনি আরও যোগ করেন, এখন অনেক জেলা যেগুলি একসময় মাওবাদী হামলায় জর্জরিত ছিল, তারা এবারে দীপাবলি উদযাপন করবে “সন্ত্রাসমুক্ত আলোর উৎসব” হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এখন পর্যন্ত মাওবাদী হিংসা নিয়ন্ত্রণে সরকার ৯০ শতাংশ সাফল্য অর্জন করেছে। “আমি আত্মবিশ্বাসী, আমাদের পুলিশ বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী বাকি ১০ শতাংশ পথও অচিরেই পেরিয়ে যাবে। ভারত খুব শিগগিরই সম্পূর্ণভাবে মাওবাদী হিংসা থেকে মুক্ত হবে,”।
এই বক্তব্যে তিনি শুধু নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবলই বাড়াননি, বরং সন্ত্রাসবিরোধী সংগ্রামে সরকারের প্রতিশ্রুতিও স্পষ্ট করেছেন। মোদীর ভাষণের সবচেয়ে মানবিক অংশটি ছিল সেইসব যুবকদের নিয়ে, যারা একসময় মাওবাদী মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যুব সমাজ আজ মাওবাদী অথবা অতিবাম মনোভাবের বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে।
যারা একসময় ৩০৩ রাইফেল হাতে নিয়েছিল, তারা আজ সংবিধানের সামনে মাথা নত করছে।” তিনি আরও বলেন, “ভারত আজ প্রমাণ করেছে উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংলাপের মাধ্যমে যে কোনও বিভেদ মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। যে এলাকায় একসময় ভয় ছিল, সেখানে আজ আত্মবিশ্বাসের আলো।”
কেন্দ্রীয় সরকার গত এক দশকে যে “Security and Development” নীতি চালু করেছে, তারই বাস্তব ফল এই সাফল্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধুমাত্র সামরিক পদক্ষেপ নয়, রাস্তা নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংযোগ বৃদ্ধির মতো উন্নয়নমূলক কর্মসূচিও এই পরিবর্তনের মূল ভিত্তি। এনআইএ, সিআরপিএফ এবং রাজ্য পুলিশ যৌথভাবে কাজ করে যেভাবে জঙ্গলমহল ও ছত্তিশগড়-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছে, তা এখন ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সাফল্যের মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তব্য শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং এক প্রতীকী ঘোষণা। তার সঙ্গে তারা এও বলেছেন যে মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ দেশ থেকে বামপন্থা কে নিশ্চিহ্ন করার এক কূটনৈতিক পদক্ষেপ। দীর্ঘ দশকের রক্তক্ষয়ের পর ভারত শান্তি ও উন্নয়নের পথে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলছে।
যুবকদের পুনর্বাসন, প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর আত্মত্যাগ এই তিন স্তম্ভেই দাঁড়িয়ে আছে ভারতের এই মাওবাদবিরোধী সাফল্য। দেশ যখন দীপাবলির আলোয় সেজে উঠছে, তখন এই বার্তা যেন আরও এক আলোর প্রতীক সন্ত্রাসমুক্ত, ঐক্যবদ্ধ ভারতের প্রতিশ্রুতি।