নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর: গ্রামীণ উন্নয়ন ও সমবায় আন্দোলনের শক্তি আবারও প্রমাণিত হল নন্দীগ্রামে। বৃহস্পতিবার এখানে আয়োজিত হল সর্বভারতীয় সমবায় সপ্তাহের ৭২তম বর্ষপূর্তির মহা-অনুষ্ঠান। পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৫,০০০-রও বেশি সমবায় কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠী (SHG)-র সদস্য, কৃষি সমবায় প্রতিনিধি এবং সহায়ক সংগঠনের কর্মীরা একত্রিত হয়ে এই আয়োজনকে রাঙিয়ে তুললেন।
অনুষ্ঠানটি ছিল প্রকৃত অর্থেই গ্রামীণ ভারতের ঐক্য, আত্মনির্ভরতা আর ক্ষমতায়নের প্রতীক। মঞ্চে বক্তারা বারবার তুলে ধরলেন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক দিক থেকেও সমবায় আন্দোলন মানুষের জীবন পাল্টে দিচ্ছে। যেখানে গ্রামাঞ্চলের নারী, কৃষক ও দরিদ্র পরিবাররা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিলেন, সেখানেই SHG ও সমবায়গুলি হয়ে উঠছে তাঁদের নতুন ভরসা।
মগধে মহারণ: কোথায় দাঁড়িয়ে বামেরা?
অনুষ্ঠানে বক্তারা কৃতজ্ঞতা জানালেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কারণ তাঁর উদ্যোগেই গঠিত হয়েছে স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রক, যা আজ দেশজুড়ে সমবায় আন্দোলনের জন্য নতুন পথ তৈরি করছে। বক্তাদের কথায় এই সিদ্ধান্ত “আত্মনির্ভর ভারত” ধারণার একটি অন্যতম ভিত্তি। সমবায়কে শুধু আর্থিক সংস্থা হিসেবে নয়, বরং গ্রামীণ ভারতের সামাজিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার মাধ্যম হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল কেন্দ্রীয় সহযোগিতা মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহকে উদ্দেশ্য করে কৃতজ্ঞতার বার্তা। বক্তারা জানান, তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব আর ধারাবাহিক নীতি-সংস্কারের ফলে সমবায় খাতে নজিরবিহীন উন্নয়ন ঘটছে। বহু রাজ্যের গ্রামগুলোতে সমবায় কৃষি, দুগ্ধ সমবায়, পশুপালন, এবং নারীদের মাইক্রো-ফাইন্যান্সিং প্রকল্প এক নতুন গতি পাচ্ছে। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন এবং তাঁদের পরিবারের জীবনে আসছে স্থিতি।
এই দিনের অনুষ্ঠানে গ্রামবাংলার উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঠময় মানুষের ঢল, SHG-র মহিলাদের নৃত্য-নাটিকা, কৃষকদের ফলন ভিত্তিক প্রদর্শনী—সব মিলিয়ে এই আয়োজন যেন পরিণত হয়েছিল এক সমবায় উৎসবে। সমবায় কর্মীরা জানালেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের নতুন স্কিমগুলি তাঁদের কাজকে আরও সহজ করছে। রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে সমবায়ের শক্তিকে আরও প্রসারিত করার অঙ্গীকারও শোনা গেল তাঁদের গলায়।
বক্তারা বলেন—সমবায় আর শুধু একটি অর্থনৈতিক মডেল নয়; এটি সমতা, গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা এবং সম্মিলিত উন্নয়নের গ্রাম-পরিকল্পনা। আর নন্দীগ্রামের এই মহাযজ্ঞ তারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ। কৃষকদের বক্তব্য—এমন উদ্যোগ গ্রামবাংলার কৃষিকে নতুন দিশা দিচ্ছে। SHG-র মহিলারা বলেন, তাঁরা আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছেন এবং পারিবারিক অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারছেন।


