২৩০ কোটির প্রতারণায় ফেঁসে গেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

murlidhar-mohol-land-deal-controversy

পুণে: ২৩০ কোটি টাকার জমি বিক্রির ঘটনায় কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মুরলিধর মোহল-এর নাম জড়িয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়। পুণের মডেল কলোনিতে অবস্থিত সেঠ হিরাচাঁদ নেমচাঁদ দিগম্বর জৈন বোর্ডিং ট্রাস্টের (SHND Trust) মালিকানাধীন ৩.৫ একর জমি ও হোস্টেল ভবন বিক্রি নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, ওই জমি গোখলে ল্যান্ডমার্কস LLP নামে এক রিয়েল এস্টেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ২৩০ কোটির বিনিময়ে।

Advertisements

বিরোধীরা দাবি করেছেন, এই চুক্তির সঙ্গে মুরলিধর মোহলের পুরনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। যদিও শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সমস্ত অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, “আমি গোখলে কনস্ট্রাকশন বা সংশ্লিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত নই। আমি বহু আগেই আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। বিষয়টি আদালতের অধীনে রয়েছে এবং আমি জৈন সমাজের পক্ষেই আছি।”

ম্যাচ গড়াপেটাতে নয়া পদক্ষেপ নিতে শীর্ষ আদালতে BCCI

মোহল জানিয়েছেন, ডিসেম্বর ২০২৪-এর ১৬ তারিখে ট্রাস্টের বৈঠকে জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ২০ ডিসেম্বর টেন্ডারের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। তিনি জানান, “আমি তার আগেই প্রতিষ্ঠান থেকে সরে দাঁড়াই। আইন অনুযায়ী কোনও সাংসদ বা মন্ত্রী ব্যক্তিগত সংস্থার পদে থাকতে পারেন না আমি সেই নিয়ম মেনেছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি ২৫ নভেম্বর ২০২৪-এ দুইটি লিমিটেড লায়াবিলিটি পার্টনারশিপ (LLP) প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেছি। আমার পদত্যাগের নথি কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে আপলোড করা আছে। তখনও জৈন বোর্ডিং বা ট্রাস্টের সঙ্গে কোনও আর্থিক লেনদেন হয়নি। তাই আমার নাম টেনে আনা অন্যায়।”

এই জমি বিক্রির ঘটনায় বিরোধী নেতা রাজু শেট্টি-সহ একাধিক রাজনীতিক মোহলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। অপরদিকে, জৈন সমাজের সদস্যরাও এই বিক্রির বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমেছেন। গত ১৮ অক্টোবর, পুণে শহরে হাজারো জৈন নাগরিক ও সন্ন্যাসী মিছিল করে “জৈন বোর্ডিং বাঁচাও কৃতিসমিতি”-র নেতৃত্বে জেলা কালেক্টরের দফতরে স্মারকলিপি জমা দেন।

Advertisements

অভিযোগ, ৩.৫ একর জায়গায় যে প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে, তা হবে ১.৬ মিলিয়ন বর্গফুটের আল্ট্রা-লাক্সারি আবাসিক ও রিটেইল কমপ্লেক্স, যেখানে ফ্ল্যাটের দাম শুরু হবে প্রায় ৭ কোটি টাকা থেকে। যদিও নির্মাতা সংস্থা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ৫১,০০০ বর্গফুটের একটি নতুন হোস্টেল ও মন্দির সম্প্রসারণ করবে, কিন্তু জৈন সমাজের মতে, “এটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা।”

এই আন্দোলনের সমর্থনে জৈন সমাজের চারটি সম্প্রদায়ই একজোট হয়েছে। আচার্য গুরুদেব শ্রী গুপ্তিনন্দজি মহারাজ-এর নেতৃত্বে সন্ন্যাসী, প্রাক্তন ছাত্র, নাগরিক ও সমাজনেতারা একত্রে জানাচ্ছেন, “এই জমি বিক্রি ধর্মীয় চেতনার বিরোধী।”

অন্যদিকে, বোম্বে হাইকোর্টে ট্রাস্টের বিক্রির বৈধতা নিয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছে SHND হোস্টেল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ASHA)। তারা দাবি করেছে, ট্রাস্ট ডিডে কোথাও জমি বিক্রির ক্ষমতা দেওয়া হয়নি, ফলে বিক্রির অনুমতি দেওয়া চ্যারিটি কমিশনারের ৪ এপ্রিলের আদেশটি বেআইনি।

মহারাষ্ট্র জুড়ে এখন এই ইস্যু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উভয় ক্ষেত্রেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মোহল জানিয়েছেন, “আমি জনগণের এবং ব্যবসায়ী সমাজের সঙ্গে সবসময় আছি, কিন্তু এই জমি-বিক্রির সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই।”