২০০২ তালিকায় নাম নেই! ময়নাগুড়িতে অবরোধ সংখ্যালঘুদের

maynaguri-sir-list-2002-protest-west-bengal

ময়নাগুড়ি: কোচবিহার ফের উত্তপ্ত উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়ি। সোমবার সকালে আচমকাই মাথাভাঙ্গা–ময়নাগুড়ি রাজপথে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন শতাধিক মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। অভিযোগ, ২০০২ সালের SIR (State Identification Register) তালিকায় তাঁদের বাবা-মায়ের নাম নেই। এই ঘটনার জেরে সকাল থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকে ব্যস্ত রাজপথ, থমকে যায় যান চলাচল।

Advertisements

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় SIR বা পুরনো নাগরিক নথির যাচাই প্রক্রিয়া চলছিল। সেই সময় বহু পরিবার দেখতে পান যে তাঁদের বাবা, মায়ের নাম তালিকায় নেই। এরপরই সোমবার সকালে তাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হন। তাঁদের দাবি, “আমাদের বাবা-মায়ের নাম হঠাৎ করে তালিকা থেকে উধাও। আমরা এই দেশের নাগরিক, কিন্তু সরকার আমাদের পরবাসী বানাতে চাইছে।”

   

SIR জন্য ফর্ম বিলি করতে গিয়ে মহিলা BLO সঙ্গে…! তারপর কি হল?

অবরোধ চলাকালীন এক বিক্ষোভকারী বলেন, “আমার বাবা ৭০ বছর ধরে এখানে থাকেন, ভোট দেন, জমি আছে। এখন হঠাৎ করে বলছে নাম নেই, নাগরিক প্রমাণ দিতে হবে! এটা কেমন অন্যায়?” ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ। পুলিশ প্রশাসন স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করে। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠে নতুন করে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপির দাবি, এই ঘটনাই প্রমাণ করছে যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা বহু বছর ধরে রাজ্যের ভোটার তালিকায় অবৈধভাবে নাম তুলেছে। এক বিজেপি নেতা বলেন, “যারা আজ নাম না পাওয়ার অভিযোগ করছে, তাঁদের অনেকেরই বাবা-মা আসলে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন।

এখন নথি যাচাই শুরু হতেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।” অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের মুখপাত্রের বক্তব্য, “রাজ্যে বিজেপি ধর্ম ও নাগরিকত্ব নিয়ে মানুষকে ভয় দেখাতে চাইছে। এরা চায় সমাজে বিভাজন তৈরি করতে। SIR লিস্টের বিষয়টি প্রশাসনিক, এর সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগ নেই।”

Advertisements

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, SIR তালিকাটি আসলে রাজ্যের নাগরিক সনাক্তকরণ প্রকল্পের পুরনো তথ্যভান্ডার, যেখানে ২০০২ সালের নাগরিক নথি সংরক্ষিত আছে। এখন সেটি পুনঃযাচাইয়ের কাজ চলছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে পুরনো রেকর্ড বা ডিজিটাল এন্ট্রিতে ভুল থাকায় নাম না পাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয় প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, “এটা কোনো নাগরিকত্ব যাচাই নয়। কিছু নামের তথ্য পুরনো বা অসম্পূর্ণ থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা প্রত্যেক আবেদনকারীর কাগজপত্র নতুন করে যাচাই করছি। কারও নাগরিক অধিকার হরণ হবে না।” তবে সাধারণ মানুষ এখনও আতঙ্কে। বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আশঙ্কা, এই যাচাইয়ের আড়ালে NRC বা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে কিনা। অনেকেই বলছেন, “আমরা এই দেশে জন্মেছি, বড় হয়েছি, এখন কেন নাগরিকত্ব প্রমাণ দিতে হবে?”

রাজ্য রাজনীতিতে এই বিষয়টি নিয়ে উত্তাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের কথায়, “নাগরিকত্বের প্রশ্ন উত্তরবঙ্গে সবসময় সংবেদনশীল। এখানে প্রতিটি এমন ঘটনা রাজনীতির বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।”

দিনের শেষে ময়নাগুড়ির মানুষ চায় একটাই জিনিস প্রশাসনের কাছ থেকে নিশ্চয়তা যে ‘আমরা এই দেশেরই নাগরিক’। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই নিশ্চয়তা পাওয়া যে এত সহজ নয়, তা আবারও স্পষ্ট হয়ে গেল সোমবারের ঘটনার মাধ্যমে।