কলকাতা: সম্প্রতি ভারতীয় সেনার অভিযানে প্রাণ গেছে কুখ্যাত মাও নেতা মাদভি হিডমার। এই ইস্যুতেই নয়াদিল্লিতে সরব হয়েছিলেন কয়েকজন অতিবাম মনস্ক ছাত্র ছাত্রী। এই ঘটনাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি অভিযোগ করেছেন যে মাওবাদী শুধু জঙ্গলে নেই আছে শহরেও। তারা বুদ্ধিজীবীর মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়।
তরুণজ্যোতি অভিযোগ করেছেন যে বাংলার কিছু বিখ্যাত লেখক লেখিকাও মাওবাদী এবং মাওবাদে বিশ্বাসী। তরুণ জ্যোতি তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন “দেশের নিরাপত্তা বাহিনী যখন জঙ্গলে প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করছে, তখন দিল্লি ও কলকাতার কিছু বুদ্ধিজীবী মোমবাতি জ্বালিয়ে সেই মাওবাদীদের পক্ষ নিচ্ছেন।
উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের ঢেকে গেল ‘চিকেন নেক’
তরুণ জ্যোতি তার পোস্টে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে সবাই যে জঙ্গলে গিয়ে মাওবাদী আন্দোলন করে তা নয়। কিছু শহুরে মানুষ আছেন যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলেন। তাদের মধ্যে কিছু লেখক লেখিকাও আছেন যারা মনে প্রাণে মাওবাদ কে সমর্থন করেন এবং তারা মুখোশ পরিহিত শহুরে জঙ্গি।
তাঁর অভিযোগ, বাংলার কয়েকজন বিখ্যাত লেখক–লেখিকা এবং শিল্পী মাওবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং ‘আর্ট–কালচার–অ্যাকটিভিজম’–এর সাহায্য নিয়ে মাওবাদকে প্রমোট করেন। যদিও কোনও নির্দিষ্ট নাম তিনি প্রকাশ করেননি, তবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে “এদের অনেকেই অতীতে সক্রিয় ছিলেন এবং আজও রয়েছেন।”
তরুণজ্যোতির আরও দাবি “বিদেশে গিয়ে যে গেরিলা ট্রেনিং তারা পায়, যে অস্ত্র আসে, যে টাকা আসে— কেউ অস্বীকার করুক বা না করুক, তার সোর্স শহরের মধ্যেই। JNU–DU–AMU–Jamia এবং JU–এর আরামকেদারা থেকে বহু বছর ধরে জঙ্গলের আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “মানবাধিকারকে ঢাল করে এদের কার্যকলাপ চলে। বই প্রকাশ, নাট্যচর্চা, আর্ট–ফেস্টিভ্যাল, গবেষণা— সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে আছে এই আদর্শের প্রভাব। এসবের অনেকটাই আসলে একটি অদৃশ্য ফান্ডিং নেটওয়ার্ক, যার শেষ গন্তব্য জঙ্গল।”
তবে রাজনৈতিক ও সাহিত্য মহলের বড় অংশ এই মন্তব্যকে “ভিত্তিহীন, তথ্যহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দাবি করেছে। অনেকেই বলেছেন, মতের অমিলেই লেখক–শিল্পীদের উপর “মাওপন্থী” তকমা লাগানোর চেষ্টা নতুন কিছু নয়। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য “কেউ রাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করলেই বা মানবাধিকার নিয়ে কথা বললেই তাঁকে মাওবাদী বলা মানে গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনার বিরুদ্ধাচরণ।”
বিশ্লেষকদের মতে, শহর বনাম বন–মাওবাদীর তত্ত্ব ভারতে নতুন নয়। গত এক দশকে একাধিকবার “আরবান নকশাল” পরিভাষা উঠে এসেছে রাজনৈতিক আলোচনায়। তবে আদালত ও তদন্ত সংস্থাগুলি বারবার জোর দিয়ে বলেছে প্রমাণ ছাড়া কোনো মতাদর্শ বা সাহিত্যচর্চা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায় না।
এদিকে তরুণজ্যোতির বক্তব্য আরও বিতর্ক বাড়িয়েছে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যের মাধ্যমে। তিনি দাবি করেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এক লেখিকা, যিনি আর নেই, তিনি যাদবপুরে ঠিক কী কী সাপ্লাই করতেন তা সবাই জানে।” নাম না নিলেও রাজনৈতিক এবং সাহিত্যিক মহলে এই কথায় শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
