জাতিগত হিংসায় ফের অগ্নিগর্ভ মণিপুর

manipur-violence-sangai-festival-clash-imphal-cocomi

ইম্ফল: রাষ্ট্রপতি শাসন চলতে থাকা মনিপুর ফের অশান্ত। সাঙ্গাই উৎসবের প্রধান স্থান, ইম্ফলের হাত্তা কাঙ্গজেইবুং গেটে পুলিশের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি (আইডিপি) এবং কো-অর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইনটেগ্রিটি (কোকোমি)-র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিশাল সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। লামলং বাজারের চারপাশে ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিয়ে এবং প্ল্যাকার্ড হাতে উৎসবের গেট ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করছে, আর পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করছে।

Advertisements

অন্তত তিনজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে দু’জন মহিলা। এই ঘটনা মণিপুরের জাতিগত সংকটের মধ্যে সরকারের উৎসব আয়োজনকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, যখন হাজার হাজার মানুষ এখনও রিলিফ ক্যাম্পে কাটছে দিন গুনছে।ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) থেকে, যখন সাঙ্গাই উৎসবের উদ্বোধনের একদিন আগে কোকোমি-র নেতৃত্বে আইডিপিরা রাজভবনের দিকে মার্চ করতে শুরু করে।

   

তারা প্ল্যাকার্ডে লিখেছে “সুরক্ষা ও ন্যায়ের আগে উৎসবের মুখোশ নয়”, “শান্তি ছাড়া সাঙ্গাই উৎসব নয়”, “মৌলিক অধিকারের আগে উৎসব নয়”। ইম্ফল ইস্টের প্যালেস গেটে পুলিশ তাদের আটকায়, কিন্তু বিক্ষোভকারীরা গোবিন্দজি ক্রসিং থেকে উঠে এসে হাত্তা কাঙ্গজেইবুং-এর দিকে এগিয়ে যায়।

প্রায় ৫০-৬০ জনের দল প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে, যা ইম্ফাল ইস্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে। পুলিশের তরফ থেকে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়া হয়েছে কয়েকবার, এবং লাঠিচার্জে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।

কোকোমির কনভেনর খুরাইজাম আথোবা মিডিয়াকে বলেছেন, “এই প্রশাসন মানুষের অনুভূতি বোঝে না। হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় কষ্ট করছে, তখন উৎসব করা অমানবিক। আমাদের দাবি প্রথমে আইডিপিদের পুনর্বাসন, হাইওয়ে খোলা, মুক্ত চলাচলের অধিকার ফিরিয়ে দিন।”সাঙ্গাই উৎসব, যা মণিপুরের রাজ্য প্রাণী সাঙ্গাই (ব্রো-অ্যান্টলার্ড ডিয়ার)-এর নামে পরিচিত, ২০১০ সাল থেকে বছরে একবার ১০ দিনের জন্য অনুষ্ঠিত হয়।

Advertisements

এটি মণিপুরের সংস্কৃতি, হস্তশিল্প, সঙ্গীত, খাবার এবং অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের প্রদর্শনী। গত দু’বছর জাতিগত সংঘর্ষের কারণে বন্ধ ছিল, কিন্তু ২১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আবার শুরু হয়েছে। সরকার বলছে, এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দরকারী স্থানীয় কারিগর, কৃষক এবং উদ্যোক্তাদের জন্য বাজার সৃষ্টি করে।

চিফ সেক্রেটারি পুনিত কুমার গোয়েল বলেছেন, “আইডিপিদের পুনর্বাসন আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার, কিন্তু উৎসবটি বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়াবে। আমরা ২৫টি স্টল আইডিপিদের জন্য রাখা হয়েছে, কিন্তু কেউ নিবন্ধন করেনি।” এবছর ৬০০টি স্টল তৈরী করা হয়েছে, কিন্তু বিক্ষোভের ছায়ায় এর আয়োজন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

বিক্ষোভ শুধু ইম্ফল ইস্টে সীমাবদ্ধ নয়। ইম্ফাল ভ্যালির বিভিন্ন রিলিফ ক্যাম্পে যেমন সামুনবুং, সঞ্জিবা, লাম্বুইখোনাহং (উরিপোক), লানোল (ইম্ফাল ওয়েস্ট), আকামপাত, স্ট্যান্ডার্ড কলেজ (ইম্ফাল ইস্ট), কেইরাও, ময়রাং, কোয়াক্তা এবং কুম্বি (বিষ্ণুপুর জেলা)— আইডিপিরা সিট-ইন প্রতিবাদ করেছে। তারা প্ল্যাকার্ডে লিখেছে “পুনর্বাসন প্রথম, তারপর সাঙ্গাই উৎসব”, “মুক্ত চলাচল প্রথম, তারপর উৎসব”, “আমরা বাড়ি ফিরতে চাই”, “আমরা ভিক্ষুক নই”।