কলকাতা: মঙ্গলবার রাজপথে SIR বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে একাধিক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর পরের দিন, বুধবার সকালেই তাঁর কাছে পৌঁছে গেল সেই ‘এনুমারেশন ফর্ম’। কালীঘাটের ৩০বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ফর্ম দেন ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ৭৭ নম্বর বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত BLO অমিতকুমার রায়।
শোনা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে প্রবেশের আগে পুলিশের সঙ্গে BLO-র সংক্ষিপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রথমে তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ চেয়েছিল, BLO যেন ফর্ম তাঁদের হাতে দেন। পরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেই ফর্ম দিয়ে আসেন অমিতবাবু।
এই ঘটনাটি একদিকে যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নিয়ম মানার প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা হচ্ছে, অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে এটি এক ধরনের রাজনৈতিক নাটক। কারণ, মঙ্গলবারই মমতা কলকাতার রাজপথে মিছিল করে কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, “বাংলাতেই কেন এত হঠাৎ করে SIR?”
নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বুধবার থেকে রাজ্যজুড়ে BLO-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু তৃণমূলের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের দাবি, ২০০২ সালে শেষবার যখন এসআইআর হয়েছিল, তখন পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে প্রায় দু’বছর সময় নেওয়া হয়েছিল। এখন এত তাড়াহুড়ো কেন?
তৃণমূলের আরও বক্তব্য, “বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তঘেঁষা আটটি রাজ্যের মধ্যে কেবল বাংলাতেই কেন এসআইআর হচ্ছে?” তারা প্রশ্ন তুলেছে “অসমে কেন হচ্ছে না? সেখানে বিজেপি সরকার, তাই সুবিধা করে দিচ্ছে কমিশন?” উল্লেখ্য, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কেরল, তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরিতেও বিধানসভা নির্বাচন হবে। এই সব রাজ্যই অবিজেপি শাসিত, শুধু অসম ব্যতিক্রম।
অন্যদিকে, বিজেপির বক্তব্য একেবারেই আলাদা। তাঁদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আচরণ ‘রাজনৈতিক নাটক’ ছাড়া কিছুই নয়। বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেন, “একদিকে মিছিল করে কমিশনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, আবার পরদিন ফর্ম নিচ্ছেন এটা আসলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর রাজনীতি।”
অন্যদিকে প্রশাসনিক মহলে BLO অমিতকুমার রায়ের পেশাদারিত্বের প্রশংসা হচ্ছে। এক উচ্চপদস্থ কমিশন আধিকারিক বলেন, “তিনি নিয়ম মেনে কাজ করেছেন, এমনটাই প্রত্যাশা।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয় এটি এখন মুখ্যমন্ত্রী বনাম কমিশনের সম্পর্কের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
