বুলা চৌধুরীকে নিয়ে মমতার মিথ্যাচারে তরুণজ্যোতির তথ্য ফাঁস

mamata-banerjee-bula-choudhury-controversy

কলকাতা: শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপ জয়ী মহিলা দলের সদস্য বাংলার মেয়ে রিচা ঘোষ কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি বক্তব্য রাখার সময় একটি বিস্ফোরক দাবি করেন যে সাঁতারু বলা চৌধুরী তার কাছ থেকে অর্জুন পুরস্কার চেয়েছিলেন। এবার এই বিতর্কিত মন্তব্যেই ফের কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।

Advertisements

বিশেষ করে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের নেতারা কটাক্ষে সরব হয়েছেন। বিজেপির নেতা এবং আইনজীবী তরুণ জ্যোতি তিওয়ারি তার বক্তব্যে স্পষ্ট ভাষায় মমতার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে বড় দেখাতে গিয়ে প্রায়ই ইতিহাস বিকৃত করেন। এইবার তিনি এমন একজন ক্রীড়াবিদকে নিয়ে মিথ্যে দাবি করলেন, যিনি দেশের গর্ব।”

   

রাজধানীতে নিরাপত্তার ঘেরাটপে দেশের প্রধান উপদেষ্টা বাসভবন, মোতায়েন কয়েক হাজার পুলিশ

কিন্তু বাস্তব তথ্য কী বলছে? সরকারি নথি ও ক্রীড়া মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, বুলা চৌধুরী ১৯৯০ সালে অর্জুন পুরস্কার পান তাঁর অসামান্য ক্রীড়া সাফল্যের জন্য, বিশেষ করে ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়ার ঐতিহাসিক অর্জনের কারণে। অর্থাৎ, এই পুরস্কারের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল না।

আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ১৯৮৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাদবপুর আসনে সিপিএম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে নির্বাচনে পরাজিত হন। ফলে, ১৯৯০ সালে তিনি সাংসদ ছিলেন না। অন্যদিকে, বুলা চৌধুরী ছিলেন তখন ভারতের সেরা সাঁতারুদের একজন, যিনি পরে ২০০৬ সালে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা আসনে জয়ী হন।

Advertisements

অর্থাৎ, মমতার দাবি অনুযায়ী বুলা চৌধুরী তাঁর কাছে পুরস্কার চাইতে গিয়েছিলেন তা সময়ের নিরিখে অসম্ভব ও তথ্যবিরোধী। ক্রীড়া মহলের একাংশও মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছে। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের মতে, “যাঁরা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের সম্পর্কে এমন অসংবেদনশীল মন্তব্য করা দুঃখজনক।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বুলা চৌধুরীর মতো আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়াবিদকে অবমূল্যায়ন করার সমান। এমন বক্তব্য একদিকে যেমন তথ্যবিকৃতি ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে রাজ্যের সম্মানকেও খর্ব করছে। বুলা চৌধুরী, যিনি একাধিকবার আন্তর্জাতিক জলপথে ভারতের পতাকা উড়িয়েছেন, ১৯৮৬ সালের এশিয়ান গেমস এবং সাফ গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেননি অথচ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই সম্পর্কেও বিভ্রান্তি দেখা যায়।

এই ঘটনার জেরে এখন রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। অনেকেই বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার ভুল তথ্য ব্যবহার করে নিজের ভূমিকা বড় করে দেখানোর চেষ্টা করেন, যা তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। শেষ পর্যন্ত, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই বুলা চৌধুরী দেশের গর্ব, বাংলার কন্যা। তাঁকে নিয়ে রাজনীতির মঞ্চে এমন বিভ্রান্তিকর মন্তব্য শুধু তাঁর নয়, গোটা রাজ্যেরই অসম্মান।