কলকাতা: ভবানীপুরে ভোটের আগে ফের ‘বহিরাগত’ ইস্যু ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে রাজ্যে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যে নতুন করে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। তিনি বলেছেন, “আমি যখন ‘বহিরাগত’ বলেছি, তখন একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কথা বলেছি যারা পরিকল্পনা করে বাইরের মানুষ এনে ভোটে প্রভাব ফেলতে চায়। কেউ কেউ কলকাতায় এসে ফ্ল্যাট কিনে বা এখানে বসবাসের ভান করে ভোটার তালিকায় নাম তুলছে। আমি শুধু মানুষকে সতর্ক থাকতে বলেছি।”
মমতার এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপির তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া। দলের আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য টুইট করে লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পূর্ণ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি এখন এমন দাবি করছেন যে, ভবানীপুরে মানুষ ফ্ল্যাট কিনছে শুধুমাত্র তাঁকে হারানোর জন্য! এটা অত্যন্ত অদ্ভুত ও হাস্যকর।
শামির বলে ইনিংস ভেঙে জয়ের দোরগোড়ায় সামনে বাংলা
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, নন্দীগ্রামের পরাজয় এখনও তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।” অমিত মালব্য আরও বলেছেন, “মমতার এই মন্তব্যই প্রমাণ করছে কলকাতার মানুষ তাঁর প্রতি কতটা বিরক্ত। মানুষ এখন তাঁকে হারাতে চাইছে যেকোনও মূল্যে। এটাই বাস্তব, এবং এর পরিণতি মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে শুভ নয়।”
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তারা আরও বলেছে যে সারা বাংলার মানুষ জানে বাংলাদেশ থেকে কিভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা বাংলায় এসে বেইনি ভাবে বসবাস শুরু করেছে। যার ফলে বাংলার মানচিত্র পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। তাদের মতে ভবানীপুর কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। এখন ভোটের আগে এই ধরণের মন্তব্য রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতার বক্তব্যের দুটি দিক রয়েছে। একদিকে তিনি তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ককে সতর্ক করতে চাইছেন যাতে তারা সক্রিয় থাকে, অন্যদিকে তাঁর বক্তব্যে আঞ্চলিক পরিচয়বাদের ছোঁয়াও স্পষ্ট। কলকাতার মতো বহুজাতিক মহানগরে ‘বহিরাগত’ শব্দের প্রয়োগকে অনেকেই সমালোচনা করছেন।
তবে তৃণমূল শিবিরের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিকৃতভাবে তুলে ধরছে বিজেপি। তারা আরও বলেছেন “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও কোনও সম্প্রদায় বা রাজ্যের মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ভোটে প্রভাব ফেলতে কেউ যেন ভুয়ো ভোটার না আনে।
এটা সতর্কবার্তা, কোনও বিভাজনের ডাক নয়।” অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব মমতার মন্তব্যকে ‘ভয় ও হতাশার প্রতিফলন’ বলে ব্যাখ্যা করছে। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছেন যে শহুরে ভোটারদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা কমছে, তাই আগাম অজুহাত তৈরি করছেন।
রাজনীতির অন্দরমহলে এই ইস্যু এখন ভবানীপুর উপনির্বাচনের সম্ভাব্য সূচনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, তৃণমূলের একাংশও মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল, কারণ এটি বিরোধীদের হাতে সহজ অস্ত্র তুলে দিচ্ছে।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “নন্দীগ্রামে হার মমতার রাজনৈতিক মানসিকতায় এক গভীর ছাপ ফেলেছে। এখন তিনি যেকোনও সম্ভাব্য বিপদ আগে থেকেই চিহ্নিত করতে চান। কিন্তু এতে কখনও কখনও তাঁর বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দেয়।”
সব মিলিয়ে, বাংলার রাজনীতি আবারও কেন্দ্রীভূত হয়েছে মমতার ব্যক্তিত্ব ও তাঁর বক্তব্যকে ঘিরে। কেউ বলছেন, এটা মমতার সতর্কবার্তা; কেউ আবার বলছেন, এটা তাঁর আত্মবিশ্বাস হারানোর ইঙ্গিত। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই ‘বহিরাগত’ বিতর্ক আগামী দিনেও বঙ্গ রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়াবে।