আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের স্মার্ট ফোন! মমতার ‘মিথ্যাচার’ ফাঁস করলেন সন্ময়

mamata-banerjee-asha-anganwadi-mobile-fund-controversy-sannmay-expose-2025

কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ঘোষণা করেছিলেন যে আশা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের স্মার্ট ফোন কেনার টাকা দেওয়া হবে। সাম্প্রতিক এই ঘোষণাকে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক তরজা। মুখ্যমন্ত্রী নিজের ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, রাজ্য সরকার এই কর্মীদের প্রত্যেককে একটি করে মোবাইল ফোন কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেবে এবং এই বাবদ বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

Advertisements

কিন্তু বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের মুখ্য মুখপাত্র সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটি স্ক্রিনশট প্রকাশ করে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য সম্পূর্ণ “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর”।

২৬ লক্ষ প্রদীপে আলোকিত হবে রামনগরী, তিন বিশ্বরেকর্ডের পথে ভারত

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম স্ক্রিনশটে দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা আছে “অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের প্রত্যেককে একটি করে মোবাইল ফোন কেনার জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের এবারের বাজেটে এই বাবদ আমরা ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলাম।”

এরপর তিনি দ্বিতীয় স্ক্রিনশট তুলে ধরেন, যা রাজ্য সরকারেরই একটি অফিসিয়াল আরটিআই (RTI) জবাব। সেখানে ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইসিডিএস (ICDS) অধিদপ্তর জানায় এই ফোন কেনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের Poshan Abhiyan প্রকল্পের অধীনে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ৫৫ কোটি ১৫ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে আরও ১৯২ কোটি ৯৪ লক্ষ ১১ হাজার টাকা রাজ্য পেয়েছিল।

অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকার গত ২০১৭ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে ফোন কেনার তহবিল পাঠিয়ে আসছিল। সন্ময়ের অভিযোগ, রাজ্য সরকার সেই টাকা অন্য খাতে সরিয়ে দিয়েছে, অথচ এত বছর পর সেই পুরনো প্রকল্পেরই বরাদ্দকে এখন “নতুন উদ্যোগ” বলে প্রচার করা হচ্ছে।

Advertisements

তিনি আরও বলেন, “এই টাকা দিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের ফোন দেওয়ার কথা ছিল ছয় বছর আগে। কিন্তু সরকার তা দেয়নি। এখন পুরনো টাকাকেই নিজের কৃতিত্ব বলে দেখানো হচ্ছে। এটা মিথ্যে, এটা শঠতা।”

বিজেপির পক্ষ থেকে এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বড়সড় রাজনৈতিক প্রচার শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূল শিবির এই অভিযোগকে “ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দাবি করেছে। এক তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা রাজ্য সরকারের নতুন বাজেটের বরাদ্দ। কেন্দ্রীয় তহবিলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।”

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য-কেন্দ্র দ্বন্দ্বে এই ইস্যু নতুন করে আগুন জ্বালাতে পারে। কারণ আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা রাজ্যের গ্রামীণ সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং তাদের অসন্তোষ রাজনৈতিকভাবে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর কাছে আরও বেশ কয়েকটি সরকারি নোট ও মেমো রয়েছে, যা প্রমাণ করবে যে কেন্দ্রীয় অর্থ রাজ্য পেয়েও সেই টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়নি। তিনি বলেন, “একজন মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রকাশ্যে অসত্য তথ্য দেন, তখন প্রশ্ন ওঠে মিডিয়া কি সত্যটা তুলে ধরবে?” এই বিতর্কে নতুন করে রাজ্য রাজনীতির তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে, এবং প্রশাসনিক মহলেও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।