দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুরে ফের ঘটল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। মঙ্গলবার গভীর রাতে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা জগদ্ধাত্রী দেবীর মূর্তি ভাঙচুর করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মল্লিকপুর গ্রামের এক শিল্পী জগদ্ধাত্রী পূজার জন্য একাধিক প্রতিমা তৈরি করছিলেন। মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, ওই শিল্পীর তৈরি একটি মূর্তির মাথা কাটা অবস্থায় পড়ে আছে। মুহূর্তে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। শিল্পীরা প্রতিমা সাজানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু ভোরবেলায় যখন তাঁরা কাজে আসেন, তখন দেখেন এক প্রতিমার মাথা কাটা পড়ে মাটিতে পড়ে আছে। সেই দৃশ্য দেখে সকলে হতবাক। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ভিড় জমে যায়। স্থানীয়রা দাবি করেন, এটি নিছক দুষ্কৃতী নয়, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ হতে পারে।
পরিবার পেনশন বিতর্কে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ, জারি নতুন নির্দেশ
ঘটনার খবর পেয়ে মন্দিরবাজার থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। প্রতিমা তৈরির স্থান ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ ও আশপাশের নজরদারি ক্যামেরা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে তদন্তকারীদের ধারণা, সোমবার গভীর রাতে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় পুজো উদ্যোক্তা সমিতির এক সদস্য বলেন, “এভাবে দেবী জগদ্ধাত্রীর মূর্তির মাথা কেটে দেওয়া শুধু ভাঙচুর নয়, এটি মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। আমরা চাই পুলিশ দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিক।” অন্যদিকে, এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি। এই গ্রাম বহু বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা করে আসছে। কে বা কারা এই কাজ করল, সেটা ভেবে আমরা আতঙ্কিত।”
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতিমা তৈরির ঘর থেকে কোনো মূল্যবান জিনিস চুরি যায়নি। তাই প্রাথমিকভাবে এটি চুরি নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে মূর্তি বিকৃত করার ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা শিল্পীর বক্তব্যও নিচ্ছেন। উল্লেখযোগ্য, গত কয়েক মাসে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কখনো দুর্গা মূর্তি, কখনো কালী প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুর। প্রশাসন তাই ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
মল্লিকপুর গ্রামে আপাতত শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। এলাকায় গুজব রটানো বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় প্রশাসন মাইকিংও শুরু করেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়। আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত চালাচ্ছি। কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগুক, তা আমরা চাই না। খুব শিগগিরই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিজেপি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলেছে, আর তৃণমূল বলছে, এই ধরনের ঘটনা রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা মাত্র। এদিকে, জগদ্ধাত্রী পূজার আগে এই ভাঙচুরের ঘটনা সাধারণ মানুষকেও ব্যথিত করেছে। মল্লিকপুরের বাসিন্দারা এখন একটাই কথা বলছেন “যে-ই হোক, দেবী মূর্তি ভাঙা মানে আমাদের বিশ্বাসে আঘাত। এমন কাজের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।”


