লখনউ: উত্তর প্রদেশে বহু প্রতীক্ষিত ৬৯,০০০ শিক্ষক নিয়োগ মামলা আবারও তীব্র বিতর্ক ও ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে। শনিবার ভোরে রাজধানী লখনউতে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা হঠাৎ করেই রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রী সন্দীপ সিং-এর সরকারি বাসভবনের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে, কারণ সরকারের পক্ষ থেকে কোনও আইনজীবী হাজিরই হচ্ছেন না।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, গত এক বছরে তাঁরা বারবার আদালতের দরজায় গিয়েছেন, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। সরকারের নিযুক্ত আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় আদালতে শুনানি একেবারেই এগোচ্ছে না। প্রার্থীদের প্রশ্ন “যখন সরকারের আইনজীবীই হাজির হন না, তখন বিচারক শুনানি চালাবেন কীভাবে?”
চোখের পলকে শত্রুর ট্যাঙ্কার নিশ্চিহ্ন করতে পারে ব্রিটেনের ব্রিমস্টোন ক্ষেপণাস্ত্র
তাঁদের অভিযোগ, সরকার ইচ্ছে করেই এই মামলা ঝুলিয়ে রাখছে, যাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বিলম্বিত হয়। অনেক প্রার্থী বয়সসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন, আবার কেউ কেউ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাঁদের জীবনের ভবিষ্যৎ এই মামলার ওপর নির্ভর করছে।
ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, সরকার দলিত ও পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। এক প্রার্থী বলেন, “সরকার আমাদের কাছ থেকে ভোট তো নেয়, কিন্তু আদালতে আমাদের হকের জন্য লড়তে একজন আইনজীবীও পাঠায় না। এটা কি ন্যায়বিচার?” তাঁরা আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি সরকার দ্রুত কোনও পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তাঁরা বিহারের গ্রামেগঞ্জে গিয়ে মানুষকে জানাবেন যে উত্তর প্রদেশের সরকার ‘দলিত-বিরোধী’।
এই ৬৯,০০০ শিক্ষক নিয়োগ মামলা রাজ্যে বহু বছর ধরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতার মধ্যে আটকে রয়েছে। শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, যোগ্যতার মানদণ্ডে গরমিল ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়। যদিও আদালত একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছে দ্রুত শুনানির জন্য, কিন্তু সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কারণে বিচার প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির।
বিক্ষোভে উপস্থিত প্রার্থীরা সরকারের কাছে তিনটি প্রধান দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করা হোক। মামলার দ্রুত শুনানি শুরু করে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হোক।
যারা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছেন, তাঁদের জন্য বয়সসীমা শিথিলের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তাঁরা সতর্ক করেছেন, যদি সরকারের পক্ষ থেকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আন্দোলন আরও বৃহত্তর রূপ নেবে এবং রাজ্যজুড়ে শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করা হবে।
অন্যদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিক শুধুমাত্র জানিয়েছেন যে বিষয়টি “সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।” তবে প্রার্থীদের অভিযোগ, এই ধরণের “নজরে আনা” আশ্বাস তাঁরা গত এক বছর ধরেই শুনছেন। বর্তমানে প্রশ্ন একটাই রাজ্য সরকার কি এবার পদক্ষেপ নেবে, নাকি ৬৯,০০০ শিক্ষক নিয়োগ মামলা আরও এক বছর নীরবতার অন্ধকারে ডুবে থাকবে?


