রোহিণী বেরিয়ে যেতেই বিশাল ভাঙ্গনের পথে লালু পরিবার

lalu-family-rift-rohini-exit-rjd-crisis-bihar-politics

পটনা: বিহারের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে যে অশান্তির আগুন জ্বলছিল, তা রবিবার আরও প্রবল রূপ নিল। রাজনৈতিক মহল ইতিমধ্যেই আরজেডি-র ভরাডুবির কারণ বিশ্লেষণে ব্যস্ত, তার মধ্যেই লালু প্রসাদ যাদবের পরিবারে ঘটছে একের পর এক নাটকীয় মোড়।

Advertisements

শনিবার সিঙ্গাপুরে থাকা রোহিনী আচার্যর বিস্ফোরক মন্তব্য ও পরিবার ছাড়ার ঘোষণার পর একদিনের মধ্যেই আরও তিন কন্যা রাজলক্ষ্মী, রাগিনী এবং চন্দা শিশুদের সঙ্গে পাটনার বাড়ি ছেড়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিলেন।

   

শুধু পরিবারের ঘরে নয়, রাজনৈতিক অন্দরে তা টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। একসময় যেখানে 10, সারকুলার রোড ছিল রাজনীতির সবচেয়ে ব্যস্ত নার্ভ সেন্টার, সেখানে এখন রয়েছেন কেবল লালু প্রসাদ, রাবড়ি দেবী ও মিসা ভারতী। এই নীরব নিঃসঙ্গতা যেন আরজেডি-র সাম্প্রতিক ভরাডুবির প্রতীক হয়ে উঠেছে।

POCO F8 Series আসছে নতুন লুকে, প্রকাশ অফিসিয়াল টিজার

আরজেডি-র এবারের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ছিল ধাক্কা তোলা ৭৫ থেকে নেমে প্রায় ২৫ আসন। সেই ব্যর্থতার পর থেকেই দলের ভিতরে অস্থিরতা জমছিল। তবে বহির্বিশ্ব যা বুঝতে পারেনি, তা ভিতরে ছিল আরও গভীর। রোহিনীর বিস্ফোরক অভিযোগ সবকিছু সামনে এনে দেয়। তিনি দাবি করেন, তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় অপমান করা হয়েছে, এমনকি তেজস্বীর দুই ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় যাদব ও সহযোগী রমিজ তাঁর দিকে চটি ছুঁড়ে মারারও চেষ্টা করে।

রোহিনী আবেগঘন পোস্টে লিখেন, তিনি “পরিবার থেকে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছেন”, বাবা–মা “কাঁদছিলেন”, এবং তাঁকে অভিযুক্ত করা হয় যে তিনি নাকি “কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন” যদিও তিনিই একসময় নিজের কিডনি দান করেছিলেন লালু প্রসাদকে বাঁচাতে। এই অভিযোগকে তিনি ‘চরম অপমান’ বলে উল্লেখ করেন। আরও একটি পোস্টে রোহিনী লেখেন, “এই সব করার নির্দেশ দিয়েছিল সঞ্জয় ও রমিজ, আর দোষ চাপানো হচ্ছে আমার ঘাড়ে।”

Advertisements

এই বিস্ফোরক অভিযোগের পর তেজ প্রতাপ যাদবের প্রতিক্রিয়া আসে বজ্রপাতের মতো। এ বছরই তিনি দল ও পরিবার থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এবার জনশক্তি জনতা দলের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে তিনি প্রকাশ্যে লিখলেন, “বোনের অপমান আমার হৃদয় কাঁপিয়ে দিয়েছে। আমাকে যত অপমান করা হয়েছে, সহ্য করেছি। কিন্তু বোনকে অপমান এ কখনও সহ্য করব না।” তিনি সোজাসুজি লালুর উদ্দেশে বলেন, “বাবা, শুধু একবার নির্দেশ দিন বিহারের জনগণ এই ‘জয়চাঁদদের’ কবর দেবে।”

তেজ প্রতাপের এই ঘনঘোর আক্রমণ নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে তেজস্বী যাদবকে ঘিরে কি একটি শক্তিশালী ‘ইনার সার্কেল’ তৈরি হয়েছে, যা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি চরম বিদ্বেষী? সঞ্জয় যাদব বা রমিজ এখনও পর্যন্ত একটি শব্দও বলেননি। তাঁদের এই নীরবতা জল্পনাকে আরও বাড়াচ্ছে। তেজ প্রতাপের নিজের বিতর্কিত অতীতও আবার সামনে আসছে।

বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট, ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে তোলপাড়, বিবাহবিচ্ছেদের কেস সব মিলিয়ে পরিবারে তাঁর অবস্থান আগেই নড়বড়ে ছিল। নিজের দল গড়ে মহুয়া আসনে ভোটে নেমে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তো দূর, তৃতীয় স্থানও সুরক্ষিত করতে পারেননি।

এদিকে, রাজলক্ষ্মী, রাগিনী ও চন্দার নিঃশব্দে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া প্রমাণ করে যে সংকট এখন কেবল রাজনৈতিক নয় এটি গভীর পারিবারিক ভাঙনের দিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে। পরিবারের সাত কন্যা মিসা ভারতী, রোহিনী, চন্দা, রাগিনী, হেমা, অনুসূকা ও রাজলক্ষ্মী সবাই শক্তিশালী পরিবারে বিয়ে করেছেন। কারও স্বামী এয়ারলাইন্সের পাইলট, কারও সমাজবাদী পার্টির নেতা, আবার কারও Haryana-র রাজনৈতিক ঘরানা। এত বড় একটি পরিবারে যখন একের পর এক সদস্য বাড়ি ছাড়তে শুরু করেন, তখন তা যে সাধারণ অশান্তি নয়, তা স্পষ্ট।

আরজেডি-র এই বিপর্যয়ের কেন্দ্রে রয়েছেন তেজস্বী যাদব। পরাজয়ের পর থেকেই তিনি জনসমক্ষে অনুপস্থিত, আর দলের ভেতরে চলছে তীব্র সমালোচনা নির্বাচনী কৌশল ব্যর্থতা, ভুল পরামর্শদাতা, ভোটার তালিকার তাড়াহুড়ো সবকিছু নিয়ে জমছে ক্ষোভ। এই মুহূর্তে পরিবারের এই ফাটল আরজেডি-কে আরও দুর্বল করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। তেজস্বীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্নের পাহাড়, আর সেই চাপে লালু রাবড়ির পরিবার ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। বিহার রাজনীতিতে এই সংকট যে বড় মোড় আনবে, তা বলাই যায়।