HomeBharatরানওয়ের কাছে মসজিদ নয়! রাজ্যসভায় বিস্ফোরক শমীক

রানওয়ের কাছে মসজিদ নয়! রাজ্যসভায় বিস্ফোরক শমীক

- Advertisement -

নয়াদিল্লি, ৩ ডিসেম্বর: রাজ্যসভায় আজ তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল কলকাতা বিমানবন্দরের রানওয়ের নিরাপত্তা নিয়ে(Kolkata Airport Mosque Runway Obstruction)। বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ ও বঙ্গ রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য একটি গুরুতর প্রশ্ন তোলেন বিমানবন্দরের অপারেশনাল এলাকায় তৈরী হওয়া একটি মসজিদ নিয়ে। তাঁর প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক যে তথ্য দিয়েছে, তা আরও বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

মন্ত্রকের জবাবে স্পষ্ট বলা হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরের সেকেন্ডারি রানওয়ের কাছে একটি মসজিদ রয়েছে, যা বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত বাধা সৃষ্টি করছে। মন্ত্রকের ভাষ্য অনুযায়ী, এই স্থাপনার কারণে সেকেন্ডারি রানওয়ের থ্রেশহোল্ড ৮৮ মিটার পিছিয়ে দিতে হয়েছে। এর ফলে জরুরি পরিস্থিতিতে বা যখন প্রাইমারি রানওয়ে ব্যবহারযোগ্য থাকে না, তখন সেকেন্ডারি রানওয়ের সম্পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

   

এসএসসি নিয়োগ কাণ্ডে নয়া নির্দেশ হাইকোর্টের

এই তথ্য সামনে আসতেই রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে। শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য “যাত্রীদের নিরাপত্তা কখনোই রাজনৈতিক তোষণনীতির কাছে বলি হতে পারে না। বিমানবন্দর একটি সুরক্ষিত এলাকা, সেখানে কোনও বাধা থাকলে তা দেশের নিরাপত্তা এবং যাত্রীদের জীবনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। রাজ্য সরকারকে এই সমস্যার গুরুত্ব বুঝতে হবে।”

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞদের মতে, রানওয়ের সামনে বা পাশে কোনও স্থাপনা থাকলে তা বিমান ওঠানামার সময় উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করে। থ্রেশহোল্ড পিছিয়ে দেওয়ার অর্থ হল, বিমান নামার বা উড়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত দূরত্ব কমে যাওয়া যা বিশেষত খারাপ আবহাওয়া, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা জরুরি অবতরণের সময় অত্যন্ত বিপজ্জনক। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, রানওয়ের ক্লিয়ারেন্স জোনে কোনও স্থায়ী নির্মাণ থাকা উচিত নয়, বিশেষ করে বিমানবন্দরের অপারেশনাল এলাকায়।

তবে এই মসজিদ সরানো বা পুনর্বিন্যাসের প্রশ্ন সহজ নয়। স্থানীয় মানুষজনের কাছে এই মসজিদটি দীর্ঘদিনের ধর্মীয় স্থান। ফলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সামাজিক সংবেদনশীলতা, আলোচনাপ্রক্রিয়া ও আইনগত অনুমতি সবটাই জরুরি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিমান মন্ত্রকের আলোচনাই এই সমস্যার সমাধানের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

ট্রিনামুল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে ইঙ্গিত, তারা বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে দেখতে পারে। রাজ্য সরকারের দাবি সাধারণত থাকে বিমানবন্দরের জমি ও নিরাপত্তা ভার Airports Authority of India-এর হাতে; জমিজট বা স্থাপনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হয়। ফলে এ ধরনের প্রশ্নকে “রাজনৈতিক তোলা-পাড়া” হিসেবে দেখানো হতে পারে।

অন্যদিকে বিজেপির মতে, এটি কোনও রাজনৈতিক বিতর্ক নয় এটি যাত্রী সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল মানদণ্ডের প্রশ্ন। শমীক ভট্টাচার্যের ভাষায়, “কলকাতা বিমানবন্দর পূর্ব ভারতের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ওঠানামা করেন। তাদের নিরাপত্তায় কোনও আপস চলতে পারে না। এই বিষয়টি বহুদিন ধরে অমীমাংসিত ছিল। এবার সরকার স্বীকার করায় সত্যিটা সামনে এসেছে।”

কলকাতা বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণ ও পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। নতুন টার্মিনাল, বর্ধিত ট্যাক্সিওয়ে এবং রানওয়ে আপগ্রেডেশনসহ বিভিন্ন প্রকল্প চলমান। এই পরিস্থিতিতে রানওয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন উঠে আসা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

এই বিতর্কের পর কী সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য ও কেন্দ্র সেদিকেই এখন নজর। মসজিদটি কি স্থানান্তর হবে? নাকি কোনও বিকল্প সমাধান খুঁজবে প্রশাসন? যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতার ভারসাম্য রেখে কীভাবে এগোবে সরকার এই প্রশ্নের উত্তরই আগামী দিনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular