রাম মন্দির নিয়ে মন্তব্যের জেরেই ‘খেসারত’ দিতে হল খেসারি লালকে

Khesari Lal Yadav

বিহারের চাপড়া আসনে গণনা এগোতেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন ভোজপুরি অভিনেতা-গায়ক ও রাজনৈতিক প্রার্থী খেসারি লাল যাদব (Khesari Lal Yadav)। জনপ্রিয় শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও, সর্বশেষ প্রাপ্ত ট্রেন্ড অনুযায়ী তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে পিছিয়ে পড়েছেন। এই পিছিয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক থেকে সাধারণ ভোটার—সবাইয়ের মধ্যে আগ্রহ ও কৌতূহল তুঙ্গে।

Advertisements

বিতর্ক শুরু হয় কয়েক সপ্তাহ আগে, যখন খেসারি লাল যাদব অযোধ্যার রাম মন্দির নিয়ে একটি মন্তব্য করেন। সেই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। অনেকেই তাঁর মন্তব্যকে অসম্মানজনক বলে দাবি করেন, আবার অন্য অংশ তাঁর বক্তব্যকে “ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে” বলে মনে করেন। যদিও তিনি পরে বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ততক্ষণে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিশেষত হিন্দু ভোটারদের একাংশের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তৈরি হয়, প্রচারপর্ব জুড়েই তা অনুভূত হয়েছে বলে অনেকেই দাবি করেন।

   

বর্তমানে চাপড়া আসনে গণনা চলছে এবং ট্রেন্ডে দেখা যাচ্ছে—খেসারি লাল যাদব প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পিছিয়ে আছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে ব্যবধান ক্রমশ বেড়েছে বলে প্রাথমিক ইঙ্গিত। যদিও চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগে কিছুই নিশ্চিত নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মত—মাঠ পর্যায়ে খেসারির বিরুদ্ধে ভোটের মনোভাব তৈরি হয়েছিল তাঁর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে।

চাপড়া আসন বরাবরই রাজনৈতিক দিক থেকে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ভোটের গতিপ্রকৃতি অনেক সময় রাজ্যের বড় চিত্রকে প্রতিফলিত করে। ভোজপুরি অঞ্চলে খেসারি লালের জনপ্রিয়তা নিঃসন্দেহে প্রবল, কিন্তু এই নির্বাচনে তাঁর সামনে বিরোধী পক্ষের ক্যাম্পেইন এবং সামাজিক মাধ্যমের চাপ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর রাম মন্দির সম্পর্কিত মন্তব্যের স্ক্রিনশট, ভিডিও ও পোস্টের অংশঘটিত ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রচারের গতিপথ বদলে দেয় বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

খেসারি লাল যাদবের রাজনৈতিক শিবির অবশ্য দাবি করছে যে এই বিতর্ক ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ—তিনি জনপ্রিয় মুখ হওয়ায় নির্দিষ্ট গোষ্ঠী তাঁকে টার্গেট করে ভুল ব্যাখ্যা প্রচার করেছে। তাঁদের মতে, চাপড়ায় এখনও বড় অংশের ভোটার তাঁর পাশে রয়েছেন এবং চূড়ান্ত ফল বদলে যেতে পারে। তবে বিরোধী শিবির বলছে—খেসারির মন্তব্য জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ভোট গণনায়।

গণনা কেন্দ্রের বাইরেও পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। তাঁর সমর্থকরা এখনও আশা করছেন যে পরবর্তী রাউন্ডে ব্যবধান কমে আসবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনভোটের মনোভাব কখনো কখনো অনিশ্চিত হলেও এই ক্ষেত্রে প্রাথমিক প্রবণতা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

Advertisements

এদিকে, জাতীয় স্তরেও খেসারি লাল যাদবকে ঘিরে বিতর্ক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া—যার মধ্যে রয়েছে সমালোচনা, ব্যঙ্গ, সমর্থন এবং পাল্টা যুক্তি—নির্বাচনে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ ধরনের বিতর্কের কারণে রাজনৈতিক প্রচারে কীভাবে প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত—বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্রচণ্ড শক্তিশালী এবং কোনও মন্তব্য বা ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হতে পারে। তার প্রভাব ইতিবাচক-নেতিবাচক দুই দিকেই যেতে পারে। খেসারি লালের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

যদিও খেসারি লাল যাদব এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি, তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করছে—তিনি গণনা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ফলাফল যাই হোক, তিনি তা সম্মান করবেন। তাঁর প্রচারকারীরা আরও জানাচ্ছেন, তিনি রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন এবং বর্তমান ম্যাচটি হেরে গেলেও, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জগতে তিনি আরও সক্রিয় থাকবেন।

চাপড়া আসনের ভোটাররাও এই নির্বাচনে খেসারির পারফরম্যান্স নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ তাঁর জনপ্রিয়তাকে যথেষ্ট মনে করলেও, কেউ আবার মনে করছেন—রাজনীতিতে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা, বক্তব্যের সংযম এবং জনসংযোগের ধারাবাহিকতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

সব মিলিয়ে, চাপড়া আসনের পরিস্থিতি এখনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা রাখলেও, প্রাথমিক ট্রেন্ডে খেসারি লাল যাদব পিছিয়ে থাকায় রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রাম মন্দির–বক্তব্যের প্রভাব কতটা প্রকৃত, তা চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পরই বোঝা যাবে। এর পাশাপাশি এই ঘটনা ভবিষ্যতের প্রার্থীদের জন্যও একটি শিক্ষা হিসেবে সামনে আসবে—নেতৃত্বে দায়িত্ববোধ ও সার্বজনীন সংবেদনশীলতার গুরুত্ব কতটা।