খড়িবাড়িতে ভুয়ো নাগরিকত্বপত্রে অনুপ্রবেশে আতঙ্কিত বিজেপি

kharibari-fake-citizenship-bjp-cbi-probe

শিলিগুড়ি: সীমান্তবর্তী খড়িবাড়িতে ভুয়ো জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্রের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাচ্ছে এই অভিযোগে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য সরাসরি দাবি করেছেন, “এটি কেবল আইন ভঙ্গ নয়, ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর এক বড়সড় আঘাত।”

Advertisements

দার্জিলিং জেলার খড়িবাড়ি, যা ভারত-নেপাল সীমান্তের একদম কাছে, দীর্ঘদিন ধরেই অনুপ্রবেশ ও জাল নথি চক্রের জন্য নজরবন্দি। এবার সেই জায়গা থেকেই উঠে এল উদ্বেগজনক তথ্য। জানা গেছে, জাল জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্র তৈরি করে একদল দুর্বৃত্ত বিদেশিদের ভারতীয় নাগরিকত্বপত্র পেতে সাহায্য করছে।

১০ হাজারের কমে বড় ব্যাটারি ও গেমিং প্রসেসর ফোন, রয়েছে ৫০MP ক্যামেরা

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “খড়িবাড়ির প্রশাসনিক অফিস থেকে যদি এমন ভুয়ো সার্টিফিকেট জারি হয়, তবে এটি রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যারা দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে এমন ছেলেখেলা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই সিবিআই বা এনআইএ এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান করুক, কারণ এটি আর শুধু স্থানীয় ঘটনা নয় এটি দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।”

ঘটনার সূত্রপাত উত্তরবঙ্গের বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের এক প্রকাশ্যে অভিযোগ থেকে। তিনি সম্প্রতি জানান, “খড়িবাড়িতে সরকারি দপ্তরের মধ্যে একটি সুসংগঠিত চক্র কাজ করছে, যারা অর্থের বিনিময়ে বিদেশিদের নাগরিকত্ব দিতে ভুয়ো নথি তৈরি করছে। রাজ্য প্রশাসন জানলেও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।” এই অভিযোগের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

বিজেপি দাবি করেছে, রাজ্যের তৃণমূল সরকার সীমান্ত এলাকার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের মতে, “রাজ্যের সরকারি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবে।”

Advertisements

একজন প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক বলেন, “যদি সত্যিই ভুয়ো জন্ম-মৃত্যু শংসাপত্র ব্যবহার করে বিদেশিরা নাগরিকত্ব পাচ্ছে, তবে এটি কেবল সীমান্ত অপরাধ নয়, জাতীয় নিরাপত্তারও সরাসরি হুমকি। এমন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংস্থার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”

খড়িবাড়ি ভারতের উত্তরবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। এখানকার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন বহু মানুষ ও যানবাহন যাতায়াত করে। প্রশাসনিক ত্রুটি বা দুর্নীতি যদি সীমান্ত এলাকায় এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা গোটা পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, রাজ্যের প্রশাসন এবং শাসকদল “রাজনৈতিক সুবিধার জন্য” অনুপ্রবেশকারীদের প্রতি নরম মনোভাব নিচ্ছে। শমীক ভট্টাচার্য স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “তৃণমূল সরকার আইনকে উপহাসে পরিণত করেছে।

আজ যদি খড়িবাড়িতে ভুয়ো নাগরিকত্বপত্র তৈরি হয়, কাল তা উত্তরবঙ্গের অন্য এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়বে।” অন্যদিকে, তৃণমূল শিবিরের পক্ষ থেকে এখনও এই অভিযোগে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রের খবর, রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ইস্যু আগামী পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। কারণ অনুপ্রবেশ ও নাগরিকত্ব ইস্যু বরাবরই বিজেপির রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান আলোচ্য বিষয়। এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্রীয় সংস্থা সত্যিই তদন্তে নামে কি না এবং খড়িবাড়ির এই “ভুয়ো নাগরিকত্ব চক্র” কতদূর বিস্তৃত তা ভবিষ্যতে কীভাবে প্রকাশ পায়।