HomeBharatসংবিধান দিবসে খড়গের বিস্ফোরক দাবিতে চাঞ্চল্য

সংবিধান দিবসে খড়গের বিস্ফোরক দাবিতে চাঞ্চল্য

- Advertisement -

নয়াদিল্লি: সংবিধান দিবসে এক দিকে যখন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা শুনছে সারা দেশ। ঠিক তখনই দেশের রাজনৈতিক মহলে বিস্ফোরক দাবি করে ফের চাঞ্চল্য ছড়ালেন বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়গে। বিতর্ক উস্কে দিয়ে খড়গে বলেন ভারতের মৌলিক মূল্যবোধ ন্যায়, সমতা, স্বাধীনতা, সাম্য ও ধর্মনিরপেক্ষতা আজ নতুন করে চাপে পড়েছে। তাঁর কথায়, “এই মূল্যবোধই ভারতের পরিচয় গড়ে তুলেছে। আজ সেই পরিচয়ই সবচেয়ে বড় সংকটের মুখে।”

রাজ্যসভায় বিরোধী নেতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে খড়গে এদিন স্মরণ করালেন স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার ইতিহাস। তিনি বলেন, যখন সংবিধান কার্যকর হয়েছিল, তখন দেশের কিছু সংগঠন বিশেষ করে RSS এটিকে ‘পাশ্চাত্য মূল্যবোধে তৈরি’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। খড়গের দাবি, “স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমতা এসব পশ্চিমা ধারণা নয়, এগুলো ভারতীয় সভ্যতারই শিকড়ে আছে। তবুও সংবিধানের বিরোধিতা করা হয়েছিল শুধু মতাদর্শগত কারণেই।”

   

একটানা ২৪ ঘন্টা উড়তে সক্ষম… এই ড্রোন পেতে পারে ভারতীয় সেনা

খড়গে বলেন, “RSS এবং একই ধারার সংগঠনগুলো তখন বলেছিল তাঁদের আদর্শ মনুস্মৃতি যেখানে জন্মের ভিত্তিতে বৈষম্যকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, তারা সংবিধানের বিরোধী ছিল।” এই বক্তব্যে তিনি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের উপরও কটাক্ষ করে বলেন, “যারা একসময় সংবিধানের চেয়ে মনুস্মৃতিকে বেশি গুরুত্ব দিত, তারা আজ আবার রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সংবিধানকে নিজেদের বলে দাবি করতে চাইছে। কতটা বিদ্রূপাত্মক, মানুষ ভুলে যায় না।”

খড়গের বক্তব্যে স্পষ্ট, বিরোধীরা মনে করছে ভারতীয় সংবিধান রক্ষাই এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক লড়াই। তিনি বলেন, “যে সংবিধান আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে, সাধারণ মানুষের অধিকার দিয়েছে, পিছিয়ে পড়া মানুষদের সুযোগ তৈরি করেছে তার উপর আজ বারবার আক্রমণ হচ্ছে।”

ওই সভায় উপস্থিত কংগ্রেস নেতা–নেত্রীদের বক্তব্য, দেশে চলমান বিভিন্ন আইন, নীতি ও রাজনৈতিক ভাষ্য সংবিধানের মূল দর্শনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাঁদের মতে, সাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক বৈষম্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ—এসবই সংবিধানের ভিত্তিকে নড়বড়ে করছে।

রাজনৈতিক মহলে খড়গের মন্তব্য নতুন বিতর্কের দরজা খুলে দিয়েছে। শাসকদল বিজেপি অবশ্য খড়গের অভিযোগকে “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর” বলে দাবি করেছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, “আমরা সংবিধানকে শ্রদ্ধা করি, দেশকে সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছি। বিরোধীরা রাজনৈতিক লাভের জন্য ইতিহাসকে বিকৃত করছে।”

তবে খড়গের বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক বিতর্কেই সীমিত নেই এটি দেশের আইনি কাঠামো ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে আরও বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, ভারতের সংবিধান সবসময়ই নানা মতাদর্শের সংঘাতের মাঝে থেকেছে, কিন্তু এর ওপর অটল আস্থা বজায় রেখেছে জনগণ। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের গণতন্ত্র শক্তিশালী কারণ এটি বিভিন্ন মতাদর্শ, ধর্ম, ভাষা ও সম্প্রদায়কে এক সুতোয় বেঁধে রাখে। তারা বলছেন, “সংবিধানের মূল চেতনা ন্যায়, সমতা, স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায্যতা এগুলি সংকুচিত হলে দেশের বহুত্ববাদই বিপন্ন হবে।”

খড়গের বক্তব্য তাই শুধু রাজনৈতিক প্রচার নয়, বরং সংবিধানের ভবিষ্যৎ রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে একটি গভীর উদ্বেগের প্রকাশ। তিনি বলেন, “সতর্ক থাকুন। যারা একসময় সংবিধান মানতে চাইত না, তারা যখন তাকে নিজেদের বলার চেষ্টা করে, তখন গণতন্ত্রের ক্ষয় শুরু হয়।” দেশজুড়ে সংবিধান দিবসের দিন যতই আসছে, ততই বাড়ছে এই বিতর্কের তাপমাত্রা। ভারতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে এই মতাদর্শগত সংঘাত কোন দিকে যায় তার উপর।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular