বেঙ্গালুরু: দেশের রাজনীতিতে ফের চাঞ্চল্য। এবার অভিযোগ খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বাসবরাজ রায়ারেড্ডি লিখলেন এক বিস্ফোরক চিঠি। সেই চিঠিতে তিনি সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের প্রশাসনের একাংশ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, এবং বালি মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলছে কোটি কোটি টাকার লুটপাট।
চিঠিতে রায়ারেড্ডির দাবি, কর্ণাটক জুড়ে বালি খনন এবং সরবরাহে এক বিপুল আর্থিক অনিয়ম চলছে, যার পরিমাণ প্রায় ₹৪০০ কোটি টাকা। তাঁর কথায়, “এই দুর্নীতির পেছনে শুধুমাত্র কিছু নিম্নপদস্থ কর্মী নয়, বড় বড় কর্মকর্তারাও যুক্ত রয়েছেন এবং তাদের মদত দিচ্ছে সরকার। রাজ্যের সম্পদ লুটে নিচ্ছে একদল প্রভাবশালী দুষ্কৃতী, যাদের প্রশাসনের ভেতর থেকেই রক্ষা করা হচ্ছে।”
ভাঙড়ে মারধর‑পাথরবৃষ্টি: তৃণমূল‑আইএসএফ-র মধ্যে তুমুল উত্তেজনা, আহত একাধিক
রায়ারেড্ডির এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই রাজনীতিতে আগুন। বিজেপি সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা বসবরাজ বোম্মাই বলেছেন, “কর্ণাটক কংগ্রেস সরকার এখন ‘লুট এবং মিথ্যার সরকার’ এটা প্রমাণ করলেন মুখ্যমন্ত্রীর নিজের উপদেষ্টা। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া আর নৈতিকভাবে এই পদে থাকার যোগ্য নন।”
অন্যদিকে, কংগ্রেস শিবিরে চাপা অস্বস্তি। দলের একাংশ এই বিষয়টিকে “অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ” বলে উড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু জনসমক্ষে রায়ারেড্ডির অবস্থান স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি যেন অবিলম্বে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। না হলে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
সূত্রের খবর, রায়ারেড্ডি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী এবং কর্ণাটকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা প্রকল্পে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর কাছ থেকে এমন অভিযোগ আসা কর্ণাটক সরকারের জন্য বড় ধাক্কা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই অভিযোগ শুধু দুর্নীতি নয়, বরং প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ অস্বচ্ছতাকেও তুলে ধরছে। রায়ারেড্ডি সরাসরি সরকারের উপর প্রশ্ন তুলেছেন, যা কংগ্রেসের ভাবমূর্তিকে গভীরভাবে নাড়া দিতে পারে।” বিজেপির দাবি, “এটি প্রমাণ করে যে কংগ্রেস সরকারের ভেতরেই দুর্নীতি বসবাস করছে। রাজ্যজুড়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বালি মাফিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারি সম্পদ লুট করছে, আর মুখ্যমন্ত্রী সব জানলেও চুপ করে রয়েছেন।”
তবে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এখনও পর্যন্ত এই অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, তিনি বিষয়টি নিয়ে দলের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন এবং তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত এই অভিযোগ কর্ণাটক রাজনীতিতে এক নতুন ধাক্কা আনতে চলেছে। কংগ্রেস যেভাবে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের দাবি তুলেছিল, এই ঘটনায় সেই দাবি এখন প্রশ্নের মুখে।