কলকাতা: তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক বক্তব্য ঘিরে ফের উত্তাল বাংলার রাজনীতি। বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তার হুঁশিয়ারি এবার পাল্টা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে তার সেই মন্তব্য “শুভেন্দু আর সুকান্ত যদি CISF ছাড়া ঘোরে, তাহলে মেরে ফেলব” ঘিরে চরম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এই মন্তব্যের জেরে আজ মুখ খুললেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। সাংবাদিকদের সামনে তিনি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “একজন সাংসদ নিজেই বলছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে জন প্রতিনিধি নিরাপত্তা ছাড়া ঘুরতে পারেন না। এতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে?”
মাদ্রাসায় জাল টাকার পাহাড়! গ্রেফতার ইমাম
শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “এই মন্তব্যে তৃণমূলের মুখোশ খুলে গেছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই স্বীকার করছেন যে, রাজ্যে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, সাংসদ বা বিধায়করাও নিরাপদ নন। তাহলে রাজ্য সরকারের কাজ কী? আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তো মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি কি সেই দায়িত্ব পালন করছেন?”
তিনি আরও বলেন, “তৃণমূলের নেতারা এখন নিজেদের ভাষায় নিজেদের ব্যর্থতা প্রকাশ করছেন। একজন সাংসদ যদি হত্যার হুমকি দেন, তা শুধু অসাংবিধানিক নয়, এটি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রকাশ।” বিজেপির অভিযোগ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নয়, রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপরও সরাসরি আঘাত।
একজন সাংসদের কাছ থেকে এমন বক্তব্য আসা, গণতান্ত্রিক কাঠামোকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, তারা এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে লোকসভার স্পিকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাবেন।
কিন্তু বিরোধী শিবিরের দাবি, এ ধরনের ‘রূপক ব্যাখ্যা’ দিয়ে হুমকির দায় এড়ানো যায় না। একজন সংসদ সদস্যের মুখে এমন হিংসাত্মক ভাষা অগ্রহণযোগ্য। শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “যখন একজন সাংসদ এমন ভাষায় কথা বলেন, তখন বোঝা যায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কীভাবে এই রাজ্য চালাচ্ছেন। আইনের শাসন নেই, আছে কেবল দলের শাসন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় তৃণমূলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে যেভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নে বিরোধীরা লাগাতার চাপ বাড়াচ্ছে, এই ধরনের মন্তব্য সেই বিতর্ককে আরও উসকে দেবে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে, এবং অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, “যদি সাংসদই নিরাপত্তা ছাড়া চলতে না পারেন, তাহলে সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা কোথায়?”
রাজ্য রাজনীতিতে যখন পঞ্চায়েতের পরবর্তী ধাপে পৌরসভা ও লোকসভা নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে, সেই প্রেক্ষিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য তৃণমূলের জন্য নতুন মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। শেষমেশ শমীক ভট্টাচার্যের কণ্ঠে ছিল তীব্র ক্ষোভ তিনি বলেন “কল্যাণের বক্তব্য আসলে একটাই প্রমাণ দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এখন ভয় ও দমননীতির রাজনীতি। যেখানে ভিন্ন মত মানেই শত্রু, আর শত্রু মানেই হুমকি।”


