জয়নগর: দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর বিধানসভা এলাকায় ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে চাঞ্চল্য। অভিযোগ উঠেছে, হরিনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বুথ নম্বর ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩৯-এ রাত প্রায় ১২টার সময় সন্দেহভাজন মুসলিম ভোটারদের নিয়ে আসা হচ্ছে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে। সূত্রের দাবি, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস এবং তার আত্মীয় তুহিন বিশ্বাসের নির্দেশে অন্ধকারের মধ্যেই বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) দিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করানো হচ্ছে।
ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া। অভিযোগকারীদের বক্তব্য, এই বেআইনি কার্যকলাপের মাধ্যমে নতুন সন্দেহভাজন নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে, যা আসন্ন নির্বাচনের আগে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য, বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস এবং তার শ্যালক তুহিন বিশ্বাস নাকি ঘটনাস্থলে নিজে উপস্থিত থেকে পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করছেন।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সংশোধনে পর্ষদের নয়া সার্কুলার জারি
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে উপস্থিত ছিল দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী মুনা ও আরিফ। মুনা নামের ওই ব্যক্তি স্থানীয়ভাবে অস্ত্রবাজ হিসেবে পরিচিত। তাকে প্রায়ই কোমরে বন্দুক নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। জানা গেছে, মুনা হল তুহিন বিশ্বাসের ‘ডান হাত’, যার প্রভাবে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
দুটি এলাকায় এই কাজ সবচেয়ে সক্রিয়ভাবে চলছে বলে অভিযোগ গাজি পাড়া এবং মসজিদ চক। এই দুই জায়গায় গরেরহাট খালের ধারে যারা প্লাস্টিকের ছাউনি ফেলে বা ছোট ছোট কুঁড়েঘর তুলে বসবাস করছে, তাদের অনেকেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে দাবি স্থানীয়দের। ফলে রাতের আঁধারে ভোটার তালিকা সংশোধনের এই উদ্যোগকে ঘিরে প্রশ্ন উঠছে এরা কি ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে?
অভিযোগকারীরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। বিশেষভাবে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (CEO West Bengal)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ করেছেন, অবিলম্বে এই ঘটনাগুলির তদন্ত করে হরিনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত ফর্ম ও নথিপত্র খতিয়ে দেখা হোক। পাশাপাশি, অভিযুক্ত BLO এবং বিধায়কের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে।
স্থানীয় এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের বক্তব্য, “যদি সত্যিই রাতের অন্ধকারে ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো সরকারি কাজ করা হয়ে থাকে, তবে তা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের সরাসরি লঙ্ঘন। এটি প্রশাসনিক অনাচার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কলুষিত করার চেষ্টা।” প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক জেলায় অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হয়েছে।
জয়নগরের ঘটনাটি সেই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় তদন্তের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা বলছেন, “রাতের পর রাত পঞ্চায়েত অফিসে আলো জ্বলছে, অচেনা মুখ আসছে–যাচ্ছে। আমরা ভয় পাচ্ছি, আগামী নির্বাচনে এদের ভোটে আমাদের এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে।” অন্যদিকে, তৃণমূল শিবির এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার।
তবে বিরোধীরা বলছে, “যদি কিছু না লুকোনো থাকে, তবে দিনের আলোয় এই কাজ করতে অসুবিধা কোথায়?” ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জয়নগর এখন কার্যত রাজনৈতিক অগ্নিগর্ভ। প্রশাসনের তরফে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, তবে তদন্তের দাবি এখন সর্বত্র।


