বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ফাটল ধরল তেজস্বী-রাহুল জোটে

jmm-withdraws-bihar-elections-alliance-rift

পটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে বিরোধী জোট INDIA-র শরিকদের মধ্যে। ঝাড়খণ্ডের ক্ষমতাসীন দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) হঠাৎই ঘোষণা করেছে যে, তারা বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এর একদিন আগেই দলটি জানিয়েছিল, তারা রাজ্যের ছয়টি আসনে এককভাবে লড়বে।

Advertisements

দলের এই ইউ-টার্ন এখন রাজনীতিতে বড় চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ, জেএমএম-এর এই সিদ্ধান্ত সরাসরি তাদের পুরনো সহযোগী লালু যাদবের আরজেডি এবং কংগ্রেস এর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনকে প্রকাশ্যে এনেছে।

হোয়াটসঅ্যাপে এখন পাওয়া যাবে আধার কার্ড! ফোনে রাখুন এই নম্বর

জেএমএম-এর সিনিয়র নেতা ও ঝাড়খণ্ডের পর্যটনমন্ত্রী সুদিভ্য কুমার বলেন, “আরজেডি এবং কংগ্রেস মিলে রাজনৈতিক চক্রান্তের মাধ্যমে আমাদের বিহারের আসন থেকে বঞ্চিত করেছে। এটি শুধু অসম্মান নয়, একপ্রকার ষড়যন্ত্র। আমরা এই আচরণের যথাযথ জবাব দেব এবং ঝাড়খণ্ডে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুনর্বিবেচনা করব।”

কুমার আরও বলেন, “জেএমএম বিরোধী ঐক্যের অংশ ছিল দেশের বৃহত্তর স্বার্থে, কিন্তু আমাদের বারবার উপেক্ষা করা হচ্ছে। এবার আমরা নিজেদের মর্যাদা রক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত নেব।” জেএমএম-এর ক্ষোভের মূল কারণ, বিহারে আসন বণ্টন নিয়ে আরজেডি ও কংগ্রেসের মধ্যে চলা টানাপোড়েন।

দু’দলই নিজেদের মত প্রার্থী ঘোষণা করতে শুরু করেছিল, যার ফলে একাধিক আসনে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’-এর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঠিক এই সময়ই জেএমএম ঘোষণা করেছিল, তারা বিহারের ছয়টি আসনে চাকাই, ধামদহ, কাটোরিয়া, মনিহারি, জামুই ও পিরপাইন্টি প্রার্থী দেবে।

Advertisements

কিন্তু মাত্র একদিনের মধ্যেই দলটি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বলে, “আমাদের পূর্বঘোষিত প্রার্থী তালিকা ছিল একটি প্রতিক্রিয়া মাত্র। মূলত আরজেডি ও কংগ্রেসের অবিচার ও রাজনৈতিক চক্রান্তের প্রতিবাদেই আমরা তা করেছিলাম।” বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাটি শুধু বিহারের নির্বাচনে INDIA জোটের প্রভাবকেই কমাবে না, বরং ঝাড়খণ্ডের সরকারকেও বিপাকে ফেলতে পারে। কারণ, ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বাধীন সরকার বর্তমানে কংগ্রেস ও আরজেডি-র সমর্থনেই টিকে আছে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “জেএমএম-এর এই প্রতিক্রিয়া INDIA জোটের অভ্যন্তরীণ ফাটল আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। যেখানে বিজেপি একাধিক রাজ্যে নিজেদের সংগঠন মজবুত করছে, সেখানে বিরোধী শিবিরের মধ্যে এই অস্থিরতা তাদের ক্ষতি করবে।”

বিহার রাজনীতিতে লালু যাদব ও কংগ্রেসের আধিপত্য বরাবরই ছিল। কিন্তু হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বে জেএমএম চেয়েছিল সীমান্তবর্তী বিহারে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে, বিশেষ করে সাঁওতাল জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে। সেই লক্ষ্যই এবার ভেস্তে গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

জেএমএমের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তারা এখন ঝাড়খণ্ডে নিজেদের শক্তি ও জোট কাঠামো পুনর্বিবেচনা করবে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এখনও পর্যন্ত এই ইস্যুতে কোনও সরাসরি মন্তব্য করেননি। তবে দলের তরফে স্পষ্ট বার্তা “আমরা আর অবমূল্যায়ন মেনে নেব না।”

বিহার নির্বাচনের রাজনীতিতে INDIA জোটের এই টানাপোড়েন নিঃসন্দেহে বিজেপির পক্ষে সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এখন নজর সকলের ঝাড়খণ্ডের দিকে সেখানে জেএমএম সত্যিই কি জোট ভেঙে ফেলবে, নাকি পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে বৈঠকের পথ বেছে নেবে, সেটাই দেখার।