জলপাইগুড়ি: সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া এক বাংলাদেশি হিন্দু পরিবারকে গ্রেফতারের পর উত্তেজনা ছড়াল জলপাইগুড়ির মেটেলি থানায়। শুক্রবার সকালে থানা ঘিরে বিক্ষোভে সামিল হন শতাধিক বিজেপি কর্মী-সমর্থক। তাঁদের দাবি, ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে এই পরিবার ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, তাই তাদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলা অন্যায়।
জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে চার সদস্যের এই হিন্দু পরিবার ভারতে প্রবেশ করে। গতকাল রাতে মেটেলি থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে, অভিযোগ বৈধ নথি ছাড়া সীমান্ত অতিক্রম। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শুক্রবার সকাল থেকেই বিজেপির কর্মীরা দলে দলে মেটেলি থানার সামনে জমায়েত হন। তাঁদের হাতে ছিল পতাকা, ব্যানার, আর গলায় স্লোগান “শরণার্থীরা অপরাধী নয়”, “হিন্দুদের আশ্রয় দাও”।
নিলামের আগে এই ৫ ভারতীয় ক্রিকেটারকে রেখে চমক শাহরুখের ফ্র্যাঞ্চাইজির!
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের কাছে দাবি জানায়, ওই পরিবারকে সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি দিতে হবে এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখতে হবে। এক বিজেপি জেলা নেতা বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নতুন কিছু নয়। এই পরিবার জীবন বাঁচাতে এসেছে। আমরা চাই না ভারতীয় পুলিশ নির্যাতিতদের শত্রুর মতো আচরণ করুক।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা শুধু বলছি, যারা ধর্মের কারণে নির্যাতিত হয়ে এসেছে, তাদের অনুপ্রবেশকারী না বলে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।” ঘটনাস্থলে উত্তেজনা আরও বাড়ে যখন বিজেপি কর্মীরা ওই পরিবারকে থানার গেটে নিয়ে এসে ফুলের মালা পরিয়ে স্বাগত জানান। তাঁদের হাতে মিষ্টি তুলে দেওয়া হয়, এবং অনেকেই “জয় শ্রী রাম” ধ্বনি তোলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক পরিবারটি বাংলাদেশের খুলনা জেলার বাসিন্দা। গত বছর নভেম্বর মাসে তারা সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসে। স্থানীয় এক চা-বাগানে তারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিল। মেটেলি থানার এক আধিকারিক জানান, “ওই পরিবারের কাছে কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। তাই ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ তৈরি হওয়ায় আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
বিজেপি জেলা সভাপতি বলেন, “মানবিকতার জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা এই পরিবারের পাশে আছি। আমাদের দল কখনও দেশবিরোধী কাজকে সমর্থন করে না, কিন্তু ধর্মের কারণে নির্যাতিত মানুষকে আমরা কখনও ফিরিয়ে দিতে পারি না।” এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছে, “আইন নিজের মতো চলবে। বিজেপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, যা প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত করছে।”
অন্যদিকে, স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে এনআইএ ও বিএসএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে, কারণ সীমান্ত নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত দিকগুলো স্পর্শকাতর। স্থানীয়দের মধ্যে মিলেমিশে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, “মানুষ যদি বাঁচার জন্য আসে, তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।” আবার কেউ কেউ বলছেন, “আইন সবার জন্য সমান, তাই তার ব্যতিক্রম হওয়া উচিত নয়।”
বর্তমানে পরিবারটিকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আদালতে তাদের তোলা হবে। জলপাইগুড়ির এই ঘটনায় আবারও সামনে এল সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ধর্মীয় নির্যাতন, শরণার্থী সমস্যা এবং রাজনীতির মিশ্র বাস্তবতা যেখানে মানবিকতার প্রশ্ন প্রশাসনিক নিয়মের সঙ্গে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।


