কলকাতা: দেশের সব রাজ্যে ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া (SIR) নিয়ে যখন বিরোধী-শাসক সংঘাত নতুন মাত্রা ছুঁয়েছে, ঠিক সেই সময় ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস মন্ত্রী ইরফান আনসারির বিস্ফোরক মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। তাঁর বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, সরাসরি প্রশাসনিক নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে সারা দেশে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি এক জনসভায় ইরফান আনসারি বলেন “সবার উচিত SIR-এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। BLO বাড়িতে এলে তাকে ঘরের ভেতরে আটকে রাখুন। তার কাজই নাম কাটানো। আমি না আসা পর্যন্ত ছাড়বেন না।” মাত্র কয়েক সেকেন্ডের এই বক্তৃতা সামাজিক মাধ্যম হয়ে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
আর তাতেই বিরোধীরা বিস্ফোরিত। BJP জাতীয় মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় বলেন “এ ধরনের আহ্বান অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। জননিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের প্রতি অপমান। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজন।”
কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন দেশজুড়ে SIR চালু করায় যেখানে শাসকদল এটিকে স্বচ্ছ ভোটার তালিকার প্রয়াস বলে দাবি করছে, সেখানে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে এই প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র আপত্তি। ঝাড়খণ্ড বিধানসভা মনসুন অধিবেশনে SIR-এর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাশ করেছিল, অভিযোগ “গরিব, পিছিয়ে পড়া ও আদিবাসীদের ভোটাধিকার দুর্বল করার চেষ্টা।” পশ্চিমবঙ্গও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলায় মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মানসিক ও শারীরিক চাপে BLOরা ক্ষতবিক্ষত। গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তিন পৃষ্ঠার একটি চিঠি পাঠিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে, যেখানে তিনি BLOদের ওপর “অমানবিক কাজের চাপ” নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন “BLOরা মানবিক সীমার বহু বাইরে কাজ করছে। সময় বাড়ানো বা সহযোগিতা করার বদলে CEO অফিস ভয় দেখাচ্ছে এটা অগ্রহণযোগ্য।”
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ ও মিছিলের ঢেউ দেখা গিয়েছে যদিও শাসক-বিরোধী উভয় পক্ষই এই আন্দোলনের দিকনির্দেশনা নিজেদের সুবিধামতো ব্যাখ্যা করছে। SIR নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে গিয়ে নির্বাচন কর্মীদের শারীরিকভাবে আটকে রাখার উস্কানি এটা এক নতুন মাত্রা।
প্রথমত, ঝাড়খণ্ডে ইরফান আনসারির বিরুদ্ধে মামলা হবে কি না, তা দেখার অপেক্ষা। দ্বিতীয়ত, বাংলায় SIR স্থগিত করার দাবি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে কি না তা এখন বড় প্রশ্ন। তৃতীয়ত, SIR প্রক্রিয়া থামলে ভোট পিছোবে কি? এ প্রশ্ন ২০২৬-এর রাজনৈতিক সমীকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গণতন্ত্রে বিরোধিতা ও প্রতিবাদ স্বাভাবিক। কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের কাজের মূল হাতিয়ার BLOদের বিরুদ্ধে মঞ্চ থেকে “আটকে রাখুন” নির্দেশ এই পরিস্থিতি দেশজুড়ে এক অস্বস্তিকর নজির তৈরি করেছে। এখন দেখার রাজনীতি আগুন জ্বালায়, নাকি গণতন্ত্রের স্বার্থে শীতল মাথার সমাধান সামনে আসে।
