গর্বের সঙ্গে জানাতে চাই যে পশ্চিমবঙ্গ দেশের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে। ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্ডিয়া ট্যুরিজম ডেটা কম্পেন্ডিয়াম ২০২৫-এর তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশী পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে স্থান পেয়েছে। সম্প্রতি এই বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, প্রকৃতি, ঐতিহ্য এবং আতিথেয়তার আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি।
কোভিড-পরবর্তী সময়ে পর্যটন শিল্পকে পুনরায় সজীব ও গতিশীল করার জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো উৎসব পর্যটন, ধর্মীয় পর্যটন, এবং MICE (সভা, প্রণোদনা, সম্মেলন ও প্রদর্শনী) পর্যটনের উন্নয়ন। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলা ও শহরেই এখন পর্যটকরা শুধু দর্শনীয় স্থানই নয়, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, স্থানীয় শিল্প, সঙ্গীত, নৃত্য এবং খাদ্যের স্বাদও উপভোগ করতে পারছেন। এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে কেবল পুনরুজ্জীবিত করা হয়নি, বরং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ মানেই সৌন্দর্যের এক অনন্য মেলবন্ধন। কলকাতা শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, সেতু ও রাস্তার সৌন্দর্য, চা বাগানের সবুজ প্রান্তর, সেন্ট্রাল ও হিমালয়ের পাদদেশে পাহাড়ি সৌন্দর্য এবং সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী—সবই মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে করে তোলে একটি অনন্য ভ্রমণ গন্তব্য। পর্যটকরা এখানে শান্তিপূর্ণ প্রকৃতির মাঝে বিশ্রাম নিতে, স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া পেতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি পর্যটকদের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্ব, জয়গানের ঐতিহ্য, লোকনৃত্য ও লোকসঙ্গীত, এবং দুর্গাপুজা, কবি পঞ্চায়েত ও বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসব পর্যটকদের মুগ্ধ করে। প্রতিটি উৎসব, প্রতিটি প্রদর্শনী এবং স্থানীয় পারফর্মেন্স পর্যটককে রাজ্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করায় এবং তাদেরকে এক গভীর অনুভূতি দেয়।
ধর্মীয় পর্যটনেও পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। বেলুর মঠের কীর্তন, দিনহাটির মন্দির, শিবপুর শ্রীশ্রী কালীমন্দির সহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানকার স্থাপত্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই আতিথেয়তা, পর্যটকদেরকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। MICE পর্যটনেও পশ্চিমবঙ্গ আজ নিজস্ব ছাপ রেখেছে। কলকাতা, হাওড়া এবং শহরের অন্যান্য আধুনিক কেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন, প্রদর্শনী এবং বৈঠক আয়োজনের জন্য প্রস্তুত। এর ফলে ব্যবসায়িক পর্যটনও নতুন মাত্রা পেয়েছে, যা রাজ্যের অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করছে। আমরা দেশি-বিদেশী সকল পর্যটককে স্বাগত জানাই পশ্চিমবঙ্গের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আতিথেয়তা উপভোগ করতে। রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও কারুশিল্প, সঙ্গীত, নৃত্য এবং স্বাদিষ্ট খাবার মিলিয়ে একটি সম্পূর্ণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা উপহার দেয়।
এই গৌরবময় অর্জনের পেছনে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন অংশীদারের কঠোর পরিশ্রম। হোটেল মালিক, গাইড, পরিবহন সংস্থা, স্থানীয় শিল্পী ও কারুশিল্পী, রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার অবদানকে আমরা বিশেষভাবে সম্মান জানাই। তাদের উদ্যোগ ও নিষ্ঠার ফলেই পশ্চিমবঙ্গ আন্তর্জাতিক পর্যটনের মানচিত্রে একটি শক্তিশালী স্থান অর্জন করতে পেরেছে। পশ্চিমবঙ্গ শুধুমাত্র একটি ভ্রমণ স্থান নয়, এটি এক অভিজ্ঞতা, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত দর্শককে মুগ্ধ করে। পর্যটকরা রাজ্যের সব কোণায় আবিষ্কার করতে পারেন নতুন নতুন রূপ, নতুন নতুন গল্প এবং নতুন নতুন স্বাদ। এই অর্জন আমাদের আরও উদ্দীপিত করেছে পশ্চিমবঙ্গকে বিশ্বের পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরার জন্য।
এই মাইলফলক আমাদের জন্য শুধু আনন্দের বিষয় নয়, বরং একটি প্রেরণাও, যা রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর পথে প্রেরণা জোগায়। আমরা আশা করি, আগামী দিনগুলোয় পশ্চিমবঙ্গ আরও বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করবে এবং দেশের পর্যটন খাতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
