পলাশের ছদ্মবেশে গেরুয়া রাজ্যে গ্রেফতার অনুপ্রবেশকারী মঈনুদ্দিন

india-madhyapradesh-bangladeshi-sheikh-moinuddin-palash-adhikari-arrest

কলকাতা: মধ্যপ্রদেশের একটি ছোট্ট শহরে এক সাধারণ পরিচয় যাচাইয়ের ঘটনাই ফাঁস করে দিল বড় এক চক্রান্ত। এক ব্যক্তি, নিজেকে মালদার কাশিমপুরের বাসিন্দা এবং একজন হিন্দু শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিলেন, আসলে ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক শেখ মঈনুদ্দিন। গত দশ বছর ধরে তিনি ভারতীয় নাগরিক সেজে ভুয়ো আধার, ভোটার ও প্যান কার্ড ব্যবহার করে গোপনে বসবাস করছিলেন।

Advertisements

ঘটনাটি শুরু হয় যখন মধ্যপ্রদেশ পুলিশ এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ভাঙা হিন্দিতে জানান, “আমি পলাশ অধিকারী, ভারতীয় নাগরিক।” প্রমাণ হিসেবে তিনি আধার কার্ড, ভোটার আইডি ও প্যান কার্ডসহ একাধিক সরকারি নথি দেখান। প্রথমে পুলিশ হতবাক সব কাগজই আসল মনে হচ্ছিল।

   

বিহারে মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াচ্ছেন তেজস্বী, নীতীশের জায়গায় কি থাকবে বদল?

তবে সন্দেহের মেঘ কাটেনি। আদালতের নির্দেশে তার নথিগুলি পুনরায় যাচাই করা হয়। সেখানে দেখা যায় তার নাম পলাশ অধিকারী, বয়স ৪২ বছর, পিতার নাম রমেশ অধিকারী, ঠিকানা কাশিমপুর, মালদা, পশ্চিমবঙ্গ। সব তথ্যই আধার ও ভোটার তালিকায় বিদ্যমান। এমনকি, ভোটার তালিকায় দেখা যায় রমেশ অধিকারীর চার সন্তান: পলাশ, সুব্রত, সৌমেন ও রাহুল। যুক্তি অনুযায়ী, রমেশ যদি ভারতীয় হন, তবে তাঁর ছেলেরা স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় হবেন। কিন্তু এখানেই আসে মোড়।

২০০২ এবং ২০১০ সালের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট (SIR) ঘেঁটে দেখা যায়, রমেশ অধিকারীর কেবল দুই ছেলে সুব্রত ও সৌমেন। পলাশ বা রাহুল নামে কোনো সন্তানই ছিল না। অথচ ২০১৫ সালে হঠাৎ ভোটার তালিকায় যোগ হয় আরও দুই “ছেলের” নাম পলাশ ও রাহুল।

তদন্তের গভীরে যেতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, রমেশ ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন। তাঁর বড় ছেলে সুব্রত জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯৫ সালে এবং ছোট ছেলে সৌমেন ১৯৯৭ সালে। অথচ পলাশের দাবি করা বয়স অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৮৩ সালে, অর্থাৎ রমেশের বিবাহের দশ বছর আগেই!

Advertisements

আদালতে রমেশ অধিকারীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “আমার মাত্র দুই ছেলে আছে। পলাশ বা রাহুল নামে কাউকে আমি চিনি না।” এই জবানবন্দির পরেই সামনে আসে চাঞ্চল্যকর সত্য যাকে সবাই পলাশ অধিকারী বলে জানছিলেন, তিনি আসলে শেখ মঈনুদ্দিন, খুলনা জেলার আহমেদপুর গ্রামের বাসিন্দা, বাংলাদেশি নাগরিক।

তদন্তে আরও জানা যায়, শেখ মঈনুদ্দিন প্রায় এক দশক আগে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং পশ্চিমবঙ্গে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত এজেন্টের সাহায্যে ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। এরপর নাম পালটে ‘পলাশ অধিকারী’ হিসেবে মধ্যপ্রদেশে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। এর আড়ালে তিনি বেশ কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন বলেও সূত্রের দাবি।

পুলিশ সূত্রে খবর, ‘রাহুল অধিকারী’ নামে আরেকজনও নথিতে যুক্ত হয়েছিলেন, তবে তাঁর অস্তিত্ব এখনো রহস্যময়। পুলিশ তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। রমেশ অধিকারী, যিনি পেশায় সাধারণ কৃষক, তিনিও অবাক হয়ে বলেন, “আমি বুঝতেই পারিনি আমার নাম ব্যবহার করে কেউ আমার সন্তান সেজে নাগরিকত্ব পেয়ে গেছে!”

এই ঘটনার পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক কীভাবে একটি বিদেশি নাগরিক সহজেই ভারতের আধার, ভোটার আইডি ও প্যান কার্ড তৈরি করতে পারল? প্রশাসনিক স্তরে কোথায় ফাঁক রয়ে গেছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা নিছক একটি প্রতারণা নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। হাজার হাজার অবৈধ অনুপ্রবেশকারী একইভাবে নকল নথি তৈরি করে ভারতের ভোটার তালিকায় প্রবেশ করছে, যা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিপদে ফেলতে পারে।

সরকারের কাছে দাবি উঠেছে, পুরনো ভোটার তালিকা পুনঃপরীক্ষা করা হোক, বায়োমেট্রিক যাচাই আরও কড়াকড়ি করা হোক এবং বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হোক।