সাতক্ষীরার ভোটার লিস্টে বাংলার পরিবার! ফের বিতর্ক বঙ্গে

india-bangladesh-dual-voter-list-controversy-gobardanga

উত্তর ২৪ পরগনা: এক পরিবারের নাম উঠে এসেছে ভারত ও বাংলাদেশের দুই ভোটার তালিকাতেই! এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে সীমান্তবর্তী গোবরডাঙায়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবরডাঙার ঢালী পরিবার প্রায় দশ বছর ধরে ভারতে বসবাস করছে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় দেখা গেছে, একই পরিবারের সদস্যদের নাম রয়েছে সাতক্ষীরা জেলার তালিকাতেও।

Advertisements

এই তথ্য ফাঁস হতেই স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নড়েচড়ে বসেছে। কীভাবে এই পরিবার ভারতীয় ভোটার কার্ড, আধার ও অন্যান্য পরিচয়পত্র পেয়েছে তা নিয়েই শুরু হয়েছে তদন্ত। এই ইস্যুতে চুপ করে বসে নেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। আগে থেকেই বিজেপি অভিযোগ করে আসছিল অবৈধ অনুপ্রবেশের।

লোন পেতে সমস্যা? সতর্ক থাকুন এই পাঁচটি বড় ভুল থেকে

তার পরে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় কয়েকজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারির নাম উঠে আসে। কয়েকদিন আগেই নাম উঠে এসেছিল নৈহাটির এক বাসিন্দার যিনি আদতে পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা। প্রায় ১০ বছর বাংলায় বসবাস করছেন। ঠিক সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে গোবরডাঙায়। একই সঙ্গে দুই দেশের ভোটার লিস্টে নাম পাওয়া গেল এই ঢালী পরিবারের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢালী পরিবারের সদস্যরা মূলত বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। প্রায় এক দশক আগে তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসেন এবং এখানকার গোবরডাঙা এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা স্থানীয়ভাবে জমি ভাড়া নিয়ে বাড়ি তৈরি করেন, ভোটার তালিকায় নাম তোলেন, এমনকি আধার ও রেশন কার্ডও সংগ্রহ করেন। এখন প্রশ্ন উঠছে কি করে কোনো কাগজ পত্র ছাড়াই তারা ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং কাদের সাহায্যে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন।

এক নির্বাচন কমিশন আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। সীমান্ত এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও উদ্বেগের কারণ। আমরা খতিয়ে দেখছি কবে ও কীভাবে তারা ভারতীয় নথি সংগ্রহ করেছে।”

Advertisements

এদিকে, ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বিজেপি অভিযোগ করেছে, “রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার বানিয়ে নির্বাচনী লাভ নিচ্ছে।” দলের এক নেতা বলেন, “এটাই প্রমাণ করছে, রাজ্যে কীভাবে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেওয়া হচ্ছে ভোটের স্বার্থে।”

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের মুখপাত্র বলেন, “এটা প্রশাসনিক গাফিলতি হতে পারে, কিন্তু বিজেপি সবকিছুতেই রাজনীতি খোঁজে। সীমান্তের মানুষের অনেক সময়ই দুই দেশে আত্মীয় বা সম্পত্তি থাকে, তাই এই ধরনের ভুলভ্রান্তি সম্ভব।”

স্থানীয় মানুষদের একাংশও এই ঘটনায় বিস্মিত। একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা জানতাম ওরা বহু বছর ধরে এখানে আছে, ছেলেমেয়েরা এখানেই স্কুলে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও নাম আছে, এটা অবিশ্বাস্য!” এই ঘটনার পর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত বহু মানুষের ওপর নজরদারি শুরু হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় যে ধালি পরিবার জাল নথি ব্যবহার করে ভারতীয় ভোটার কার্ড পেয়েছে, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা সীমান্ত নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় বড় প্রশ্ন তুলেছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মুক্ত চলাচল না থাকলেও, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে আত্মীয়তা ও সামাজিক সম্পর্কের কারণে বহু মানুষ প্রায় নিয়মিত দুই পাশে যাতায়াত করেন।

তবে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এই ধরনের দ্বৈত পরিচয় আইনত অপরাধ। ফলে গোবরডাঙার এই ঘটনাটি শুধু স্থানীয় রাজনীতি নয়, বরং জাতীয় পর্যায়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। প্রশ্ন একটাই সীমান্তের ধারে থাকা পরিবারগুলোর প্রকৃত নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে সরকার আদৌ কতটা প্রস্তুত?