নয়াদিল্লি: বাংলায় বাবরি মসজিদ তৈরী নিয়ে বাড়ছে ধর্মীয় চাপানউতোর। সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে রাজনীতি। তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবির সম্প্রতি মন্তব্য করেন মুর্শিদাবাদে একটি বাবরি মসজিদ বইটি হবে এবং যার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হবে ৬ ডিসেম্বর। তিনি আরও বলেছিলেন এই অনুষ্ঠানে ২ লক্ষ লোক জড়ো হবেন।
হুমায়ূনের এই মন্তব্যেই মুখ খুলেছেন ভারতের এমাম প্রধান ড. ইলিয়াসি । ড. ইলিয়াসি বলেন, “আমার মনে হচ্ছে দেশের পরিবেশ আবার খারাপ করার ষড়যন্ত্র চলছে। এটা তদন্তের বিষয়।” তাঁর দাবি, এ ধরনের বক্তব্য দেশের সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে এবং এর নেপথ্যে বাইরের প্রভাবও থাকতে পারে।
বাংলায় বাবরি মসজিদ নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একদম পাশেই আমি সন্দেহ করছি, এই বিষয়টা সেখান থেকেই উসকে দেওয়া হচ্ছে কিনা। সরকার ও তদন্তকারী সংস্থার উচিত খুঁটিয়ে দেখা।” তাঁর বক্তব্যের শেষাংশে তিনি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে।
“তিনি তো তৃণমূলের বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তিনি তো শিলান্যাস করতে চান তাহলে মমতা ব্যানার্জি কি সেই মসজিদে নামাজ পড়তে যাবেন? তিনি কি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যাবেন?” প্রশ্ন তোলেন ইলিয়াসি।
রাজনৈতিক মহলে তাঁর এই মন্তব্য তীব্র আলোড়ন তুলেছে। বিজেপি শিবিরে এই বক্তব্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, কারণ ভোটের আগে অনুপ্রবেশ ইস্যু এবং ধর্মীয় বিতর্ক রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও দলীয় সূত্রের দাবি, হুমায়ুন কবিরের মন্তব্যকে বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।
বিশেষজ্ঞদের মত, অনুপ্রবেশ ইস্যু দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটিকে ধর্মীয় আবহে না ফেলাই উচিত। কারণ ইতিহাস দেখিয়েছে ধর্মীয় আবেগ এবং রাজনৈতিক কৌশল মিশলে দেশের সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই যেকোনো পক্ষের বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা জরুরি।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনই বলা কঠিন। তবে স্পষ্ট, ভোটের আগে অবৈধ অনুপ্রবেশ, নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার এবং ধর্মীয় বিতর্ক এ সবকিছু মিলে দেশের রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে দ্রুত। জনগণের কাছে এই ইস্যুগুলোর উপস্থাপনা এবং বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে নির্বাচনী সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের নীরবতায় আশ্চর্য হয়েছেন ইমাম প্রধান ইলিয়াসি। তিনি সরাসরি রাজ্য সরকারকে প্রশ্ন করেছেন যে এই ধরণের সাম্প্রদায়িক বিবাদের কালে তারা নীরব কেন। শুধুই একজন নেতাকে খুশি করতে না ভোট ব্যাঙ্ককে অক্ষুণ্ন্ন রাখতে। সঙ্গে তিনি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন যে মমতা যদি এই ধরণের সাম্প্রদায়িক বিবাদের সময়ে নীরবতা পালন করেন তবে এই বিষ বৃক্ষের ফল তাকেই খেতে হবে।
