আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবার আয়োজক পাকিস্তান। আর পাঁচটা দেশের মতো সেখানেই খেলতে যাওয়ার কথা ভারতের। কিন্তু পাকিস্তান নিয়ে বরাবরই সতর্ক ভারতীয় বোর্ড। কারণ বিদেশমন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত না পাওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বিসিসিআই (BCCI)। কিন্তু সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্থান ও সময়সূচি ঘোষণা করেছে আইসিসি। তাতে দেখা গিয়েছে ভারতের একটি ম্যাচ লাহোরে আয়োজন করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বা পিসিবি (PCB)। আর নিয়েই বেঁধেছে বিপত্তি। কারণ এই লাহোরেই দাপিয়ে ঘুরে বেড়ায় ২৬/১১ মুম্বাই জঙ্গি হামলার অন্যতম মুখ্য চক্রী, জাকির-উর-রেহমান লাখভি (Zakir-Ul-Lakhvi)। পাকিস্তানে লস্কর-ই-তৈবা (LeT)-এর প্রধান সামরিক কমান্ডার হিসেবে পরিচিত, আজও পাকিস্তানের (Pakistan) বিভিন্ন শহরে ঘুরছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আল-কায়দা স্যাংকশন্স কমিটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডির মতো শহরে তিনি অত্যন্ত সাবলীলভাবে চলাফেরা করছেন, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানের (Pakistan) ভাবমূর্তি নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
Khalistan: ‘কানাডিয়ান ইউরোপ যাও’, খালিস্তান প্রশ্রয়েই এবার ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের’ দানব গিলছে কানাডাকে?
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই শহরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ১৭৫ জন মানুষ প্রাণ হারান এবং একাধিক স্থানে আক্রমণের মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা শহরটিকে আতঙ্কিত করে তোলে। এই হামলার পেছনে ছিলেন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সদস্যরা। তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, হামলার পরিকল্পনা এবং সমন্বয়কারী ছিলেন লস্কর-ই-তৈবার প্রধান সামরিক কমান্ডার, জাকির-উর-রেহমান লাখভি (Zakir-Ul-Lakhvi)।
আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, লাখভি এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এবং তিনি পাকিস্তানে থেকে সরাসরি হামলার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (FBI)-এর কাছে ডেভিড হেডলি, যিনি এক সময় মার্কিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (DEA) এজেন্ট ছিলেন এবং পরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছিলেন, লাখভির সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। হেডলি জানান যে, লাখভি ছিল মুম্বাই হামলার প্রধান মাস্টারমাইন্ড।
লাখভির বিরুদ্ধে পাকিস্তানে মামলা চললেও, সে মুক্তভাবে চলাফেরা করছে। পাকিস্তানি আদালত তাঁকে ২০১۵ সালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দণ্ডিত করলেও, তিনি কখনোই যথাযথ শাস্তি ভোগ করেননি। এমনকি তাঁকে জামিনও দেওয়া হয়। পাকিস্তানের আদালত এবং প্রশাসনের উদাসীনতা ও বিশেষ সুবিধাভোগী মনোভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
দিল্লি কংগ্রেসে বড় ধাক্কা, তিনবারের বিধায়ক বীর সিং ধিংগান যোগ দিলেন কেজরিওয়ালের দলে
লাখভির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত থাকলেও, পাকিস্তানে সে একেবারেই নিরাপদ। পাকিস্তানের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি নেতাদের মতো লাখভি পাকিস্তানে সুরক্ষিত অবস্থায় বসবাস করছেন। কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডি শহরে সে নিয়মিত ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রশাসন কখনোই তাকে গ্রেফতার বা তার গতিবিধির প্রতি নজর রাখতে সফল হয়নি।
জাকির-উর-রেহমান লাখভির মুক্ত চলাফেরা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের পক্ষ থেকে বারবার চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে পাকিস্তানের উপর। তবুও, পাকিস্তান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আল-কায়দা স্যাংকশন্স কমিটি ২০১২ সালে লাখভির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও, পাকিস্তান তাকে থামানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি।
এদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রতি অভিযোগ উঠেছে যে, সে দেশে মুম্বাই হামলার মূল দায়ীদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে এবং তারা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা দেখাচ্ছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদেশ মন্ত্রক বারবার পাকিস্তানকে এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
গ্যাস ভর্তুকি-বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে কংগ্রেস নেতার প্রতিশ্রুতিতে সরব প্রধানমন্ত্রী
জাকির-উর-রেহমান লাখভি বর্তমানে “আবু ওয়াসি” নামে একটি নতুন ছদ্মবেশ গ্রহণ করেছেন। তাঁর নতুন নামের মাধ্যমে তিনি নতুন করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করছেন কিনা, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলি খোঁজখবর নিচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের মতে, লাখভির প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা উচিত, কারণ তার নতুন পরিচয়ে নেপথ্য পরিকল্পনা থাকতে পারে।
জাকির-উর-রেহমান লাখভি, যিনি ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন, এখন পাকিস্তানে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং পাকিস্তান তাকে গ্রেফতার করার কথা বললেও, বাস্তবে তিনি এখনও দন্ডমুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলে এই বিষয়টি নিয়ে তীব্র উদ্বেগ রয়েছে, এবং ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। পাকিস্তানের সরকারের মনোভাব যদি পরিবর্তন না হয়, তবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।