ঘুম কেড়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিস্ফোরক হিমন্ত

himanta-biswa-sarma-controversial-remarks-miya-muslims-eviction-assam

গুয়াহাটি, ২২ নভেম্বর: অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সাম্প্রতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে নতুন রাজনৈতিক ঝড়। একটি জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “যতদিন আমি আছি, যাদের ‘মিয়া মুসলিম’ বলা হয়, তারা অসমে শান্তিতে থাকতে পারবে না। আমার দায়িত্ব তাদের অশান্ত রাখা। যত বেশি প্রতিবাদ করবে, উচ্ছেদ অভিযানের গতি তত বাড়বে।” তাঁর এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধী দল, মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisements

মুখ্যমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে ঘরজমি দখল ও নদীর চর এলাকায় বসবাসকারী অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নিয়ে এসেছেন। সরকার দাবি করে আসছে যে, এই অঞ্চলগুলো বেআইনি দখলের মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে এবং প্রাকৃতিক অঞ্চলের ক্ষতি করে নদীর গতিপথ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, উচ্ছেদ অভিযানের মূল লক্ষ্য জনবসতি পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভূমি পুনরুদ্ধার  তবে তাঁর নতুন মন্তব্য বহু মানুষের কাছে এই প্রক্রিয়ায় ধর্মীয়–জাতিগত উত্তেজনা যুক্ত করে দিল বলে মনে হচ্ছে।

   

পাকিস্তানের কারখানায় বিধ্বংসী বিস্ফোরণ, আহত বহু

বক্তব্যটি ছড়িয়ে পড়তেই বিরোধীরা তার তীব্র নিন্দা করে। কংগ্রেস, AIUDF এবং বাম দলগুলোর অভিযোগ এই ধরনের মন্তব্য শুধু একটি জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে বিদ্বেষ ছড়ায়, যা সংবিধানের মৌলিক সমতার নীতির পরিপন্থী। AIUDF নেতা বদরুদ্দীন আজমল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যদি জানান তাঁর দায়িত্ব একটি সম্প্রদায়কে অশান্ত রাখা, তবে তা গণতান্ত্রিক শপথের লঙ্ঘন।” কংগ্রেসের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনের আগে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন যাতে মেরুকরণ আরও গভীর হয়।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে পদাধিকারীর অবস্থান থেকে প্রকাশ্যে কোনও জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে এমন মন্তব্য সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। তাদের বক্তব্য, প্রশাসনিক নীতি ও রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যকার সীমারেখা বজায় রাখা অপরিহার্য।

Advertisements

তবে শাসক বিজেপি নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সওয়াল করেছে। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। দলের অবস্থান নদীর চর এলাকায় বেআইনি দখল ও অবৈধ বসতি উচ্ছেদ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতি, যা কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং অবৈধ বসতির বিরুদ্ধে। বিজেপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, “অসমের প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও জনবসতি কাঠামো রক্ষা করতে রাজ্য সরকার দৃঢ় ভূমিকা নিচ্ছে। অপপ্রচার ছড়িয়ে বিষয়টিকে ধর্মীয় রঙ দেওয়া ভুল।”

এদিকে, বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য ভবিষ্যতের রাজনীতি ও জনমতকে বড়ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অসমে বহু দশক ধরে পরিচিতি, ভূমি, নাগরিকত্ব ও অভিবাসন প্রশ্ন রাজনৈতিক অস্থিরতার অন্যতম উৎস। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে  আবার সরকারের মূল ভোটব্যাংক শক্তিশালী করতেও পারে।

বিতর্ক থামার কোনও লক্ষণ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা ও পাল্টা-আলোচনার মধ্যেই শাসক শিবির নীতিগত দৃঢ়তার উপর জোর দিচ্ছে, আর বিরোধীরা দাবি করছে সরকার সচেতনভাবে বিভাজন তৈরি করে জনজীবনের মূল প্রশ্ন থেকে মানুষের দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই মানবাধিকার সংগঠনগুলি বক্তব্যটির আইনি বৈধতা নিয়ে আলাপ–আলোচনা শুরু করেছে।

অসমের ভবিষ্যৎ রাজনীতি যে এই মন্তব্যের অভিঘাতে নতুন মোড়ে ঢুকতে যাচ্ছে — তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। রাজ্যের জনগণের একটি বড় অংশ ভূমি নিরাপত্তা, জনপরিসংখ্যান ও বৈশ্বিক অভিবাসনের প্রশ্নকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে; অন্যদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আশঙ্কা করছে যে সরকারি নীতি তাদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই দুইয়ের সীমারেখাতেই নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে।