গোয়া: গোয়ার বহুল আলোচিত “ক্যাশ ফর জবস” বা টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার কেলেঙ্কারিতে ফের নতুন মোড়। এই মামলার এক অভিযুক্ত পুজা নাইক সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ভিডিও বার্তায় অভিযোগ তুলেছেন যে গোয়া সরকারের এক মন্ত্রী, এক সিনিয়র আইএএস অফিসার এবং এক প্রকৌশলী এই কোটি টাকার ঘুষ-কেলেঙ্কারিতে জড়িত। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত বিষয়টিতে কঠোর তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
ভিডিও বার্তায় পুজা নাইক দাবি করেছেন, তিনি শুধুমাত্র “একটি মাধ্যম” হিসেবে কাজ করতেন ঐ তিনজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির নির্দেশেই বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এখনও প্রায় ১৭ কোটি টাকা ফেরত পাওনা রয়েছে যা মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করেছেন। নাইক বলেন, “আমি কেবল আদেশ পালন করেছি, টাকা তাদের হাতেই গিয়েছিল। এখন আমাকেই একমাত্র দোষী করা হচ্ছে।”
বন্ধুকে গুলি: দুই স্কুলপড়ুয়ার নৃশংস কাণ্ডে চাঞ্চল্য!
এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই গোয়া রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলগুলির তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি উঠেছে, অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করে অবিলম্বে স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে। রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত বলেন, “পুজা নাইকের বক্তব্য আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। তাঁর বিবৃতি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে রেকর্ড করা হবে। তিনি যার নাম বলবেন, আইন তারই পথে চলবে। তদন্তে কারও দোষ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, “অভিযোগ মানেই দোষ নয়। তদন্তেই সব প্রকাশ পাবে।” তাঁর এই মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে সরকার বিষয়টিকে প্রকাশ্যে রাখতে চাইলেও এখনই কাউকে নামিয়ে দিতে রাজি নয়। পুজা নাইককে গত বছরের অক্টোবরে গ্রেফতার করেছিল গোয়া পুলিশ। অভিযোগ ছিল, তিনি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা নিয়েছিলেন সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। পন্ডা ও বিচোলিম থানাসহ একাধিক থানায় তাঁর বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
তদন্তে উঠে এসেছে, নাইক ও তাঁর সহযোগীরা বহু প্রার্থীর কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে ঘুষ নিয়েছিল। অনেকেই বলেন, তাদের বলা হয়েছিল “মন্ত্রীস্তরে ব্যবস্থা হয়ে গেছে” কিছু দিন অপেক্ষা করলেই নিয়োগপত্র মিলবে। কিন্তু চাকরি তো মিলেনি, উলটে টাকা গায়েব।
তখনই শুরু হয় পুলিশের অনুসন্ধান। এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই গোয়ায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি অভিযোগ তুলেছে শাসকদলের একাংশ প্রশাসনের ভেতরে থেকে দুর্নীতি ঢাকতে চাইছে। রাজ্যের যুব সমাজ ক্ষোভে ফুঁসছে, কারণ তাদের বহুজনই জীবনের সঞ্চয় খুইয়ে এখন পথে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পুজা নাইকের ভিডিও যদি সত্যি হয়, তবে এটি গোয়া রাজনীতিতে এক বড় ভূমিকম্প ঘটাতে পারে। কারণ এক মন্ত্রী ও এক আইএএস অফিসারের নাম জড়ানো মানেই প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে দুর্নীতি প্রমাণিত হতে পারে।
অপরদিকে, যদি প্রমাণ না মেলে, তাহলে এটি সরকারবিরোধী প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলে অনেকে মনে করছেন। এখন গোয়া জুড়ে মূল প্রশ্ন একটাই পুজা নাইক কি সত্যিই সত্য বলছেন, না কি তিনি নিজের শাস্তি লঘু করতে অন্যদের নাম টানছেন? মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আদালতের তত্ত্বাবধানে তদন্ত শুরু হলে সত্য সামনে আসবেই।
