পূর্ব মেদিনীপুর: পূর্ব মেদিনীপুরের কেশবপুর এলাকায় এখন চলছে অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খলা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অঞ্চলের প্রায় ৮০ শতাংশ জনসংখ্যা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া বা SIR শুরুর পর থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গণপালায়নের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে। বেশিরভাগ বাড়িঘর তালাবন্ধ, রাস্তায় নির্জনতা, আর মানুষের ভয়ার্ত চোখে একটা অদ্ভুত আতঙ্কের ছায়া।
অনুপ্রবেশকারীরা ভয় পাচ্ছেন যে, ভোটার অধিকার হারানোর পাশাপাশি তাদেরকে আটক ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। ফলে, তারা পালাচ্ছেন বাংলাদেশের দিকে। এদিকে, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) জানাচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের ভিড়ে জ্যামপ্যাকড অবস্থা, যারা এখনো ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছে। এই ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, রাজ্যব্যাপী এবং জাতীয় রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে।
সুপার লিগ কেরালায় খেলতে পেরে খুশি ঈশান পন্ডিতা
এসআইআর প্রক্রিয়াটি ২৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার সঙ্গে শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ভোটার তালিকা থেকে জাল নাম, মৃত ব্যক্তির নাম এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ দেওয়া। কিন্তু বিরোধী দল বিজেপি এটাকে একটা বড় অস্ত্র বলে দেখছে। তাদের দাবি, বঙ্গে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী রয়েছে, যারা তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অমিত মালব্য বলেছেন, “কেশবপুরের মতো এলাকায় বাড়িঘর তালা লাগিয়ে অনেকে পালিয়েছে। সিপিএম থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই এদের আশ্রয় দিয়েছে, এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রক্ষা করতে পারবেন না।” জাগরণের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেশবপুরের ঘরবাড়ির অধিকাংশই খালি, আর যারা রয়ে গেছে তারা ভয়ে কাঁপছেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, “আমরা শুনছি, এসআইআর-এ নাম কাটা হলে জেল-জরিমানা, এমনকি দেশ থেকে বিতাড়িত হব।
কে চায় এমন ঝুঁকি?”কেশবপুরের এই দৃশ্য শুধু স্থানীয় নয়, সারা উত্তর ২৪ পরগণায় ছড়িয়ে পড়েছে। হাকিমপুর সীমান্ত চেকপোস্টে গত ১৫ দিনে ১,৫০০-এর বেশি বাংলাদেশি ফিরে গেছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিদিন ২০০-৩০০ জন বাক্স প্যাটরা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হচ্ছে, বিএসএফ-এর কাছে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছে। একজন নাম গোপন রাখার শর্তে বললেন, “আমরা সাতক্ষীরা থেকে এসেছিলাম পাঁচ বছর আগে। হাওড়ায় বসবাস করতাম।
এসআইআর-এর খবর শুনে ভয় লাগল, শুনলাম এটা এনআরসি-এর প্রস্তুতি। ঝুঁকি নিলাম না।” বিএসএফ কর্মীরা বলছেন, এরা স্বেচ্ছায় ফিরে যাচ্ছে, কিন্তু কিছু অবৈধভাবে পালানোর চেষ্টা করছে, যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে ৪৮ জনকে ধরা হয়েছে বসিরহাট এলাকায়, যারা মেয়েদের কাজ বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করত।এদিকে, সীমান্তে আরেকটা অদ্ভুত চিত্র। বিএসএফ-এর দাবি, যদিও অনেকে ফিরে যাচ্ছে, তবু সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের ভিড় বাড়ছে।
সূত্রের খবরে জানা যাচ্ছে হাকিমপুরে শত শত মানুষ ব্যাগ-সামান নিয়ে বসে আছে, কিন্তু একইসঙ্গে নতুন অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলছে। বিএসএফ একজন কর্মকর্তা বললেন, “সীমান্ত জ্যামপ্যাকড। কেউ ফিরছে, কেউ ঢোকার চেষ্টা করছে। আমরা ১০০০ স্ক্যানার ইনস্টল করছি ট্র্যাক করার জন্য।” গত কয়েকমাসে ২৯৬টা স্ক্যানার লাগানো হয়েছে, যা বায়োমেট্রিক ডেটা রেকর্ড করে। এই অবস্থা রাজনৈতিক টানাপোড়েন বাড়িয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসআইআর-কে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ আর ‘ভোটবন্ধি’ বলে অভিহিত করেছেন, নির্বাচন কমিশনকে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এটা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। বিজেপি ভোটার কাটছে।” বিজেপি এর জবাবে বলছে, এটা অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক রক্ষার চেষ্টা। সুধানশু ত্রিবেদী বলেছেন, “তৃণমূল আর কংগ্রেসের এই আপত্তি অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র।”
