জমি-চাকরি দুর্নীতি মামলায় লালুকে সমন ইডির

রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জমির বিনিময়ে রেলে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে। এবার সেই দুর্নীতি মামলায় লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে তদন্তে…

ED Summons Lalu Prasad and Family in Land-for-Jobs Case on Wednesday

রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জমির বিনিময়ে রেলে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে। এবার সেই দুর্নীতি মামলায় লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)(ED)। লালুর পাশাপাশি, ইডি তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং পুত্র তেজপ্রতাপ যাদবকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে।

Advertisements

এই মামলার মূল অভিযোগ হচ্ছে, লালুপ্রসাদ যাদব রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে, জমির বিনিময়ে রেলে চাকরি দেওয়ার মাধ্যমে দুর্নীতি করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে যে, একাধিক ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ী লালুপ্রসাদের কাছে জমি দিয়েছিলেন এবং তার বিনিময়ে রেলে চাকরি পেয়েছিলেন। এক্ষেত্রে, লালুপ্রসাদ যাদবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অমিত কতোয়াল একটি সংস্থা “একে ইনফোসিস্টেমস” নামে প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি পাটনায় বহু জমির মালিক। এসব জমি চাকরি দুর্নীতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

Advertisements

গত বছরের আগস্ট মাসে ইডি এই দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট পেশ করে। চার্জশিটে বলা হয়েছে, অমিত কতোয়াল এই সংস্থার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জমি অর্জন করেন, যা লালু পরিবারের কাছে চলে যায়। পরে এই জমির শেয়ার লালু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাগ করা হয়। সেখানে রাবড়ি দেবীর ৮৫ শতাংশ শেয়ার এবং তেজপ্রতাপ যাদবের ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিল।

চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, অমিত কতোয়াল এই জমিগুলি মূলত চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে পেয়েছিলেন। একে ইনফোসিস্টেমসের মাধ্যমে অনেক জমি ক্রয় করার পর সেই জমি পুরোপুরি লালু পরিবারে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি একটি জটিল দুর্নীতির চক্র ছিল, যেখানে অনৈতিকভাবে জমির মালিকানা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, লালুপ্রসাদ যাদব এবং তাঁর পরিবার কর্তৃক এই জমি বিতর্কের বিষয়টি বিহারের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিরোধীরা দাবি করেছেন, এটি সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং গণমানুষের সঙ্গে প্রতারণা। তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিরোধী দলের নেতারা এই মামলাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে ব্যাপক আন্দোলন ও প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিহারের রাজনীতি বরাবরই উত্তপ্ত এবং এই ঘটনায় তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়ই একে একে এই দুর্নীতি মামলার তীব্র সমালোচনা করেছে। বিরোধী দলগুলির মতে, এই দুর্নীতির ঘটনা মানুষের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি করবে। তবে, লালুপ্রসাদ যাদব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

ইডি এখন পর্যন্ত তদন্তে যা পেয়েছে, তা অনেকটাই তৃণমূলের দাবি সমর্থন করে। ইডি এই বিষয়ে আরও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং যত শিগগির সম্ভব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের ফলে একাধিক বড় রেল প্রকল্পের দুর্নীতির ক্ষেত্রেও নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে।

যতই রাজনৈতিক বিতর্ক হোক না কেন, ইডি এর তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে একথা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, লালুপ্রসাদ যাদব এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। এটি শুধু বিহারের রাজনৈতিক পরিবেশই নয়, গোটা দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তীব্র আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ইডি যদি এই মামলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে তা দেশের শাসক শ্রেণীর মধ্যে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।