নয়াদিল্লি, ২৩ নভেম্বর: ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে ফের চাঞ্চল্যকর মন্তব্য নির্বাচন কমিশনের। ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) সাম্প্রতিককালে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (এসআইআর) শুরু করেছে ভোটার তালিকা পরিষ্কার করতে, যা ২০০৩ সালের পর থেকে বন্ধ পড়ে ছিল।
কেন বন্ধ? ইসিআই-এর মতে, তৎকালীন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা কমিশনকে হুমকি দিয়েছিলেন, যাতে এই প্রক্রিয়া চালানো না যায়। আজ যখন নির্বাচন কমিশন আবার এগোচ্ছে, তখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (আইএনসি) এর বিরোধিতা করছে।
প্রস্তুতির মাঝেই দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিলেন জয় গুপ্তা
প্রশ্ন উঠছে এত আতঙ্কের কারণ কী? মৃত, ডুপ্লিকেট, স্থানান্তরিত ভোটার আর অনুপ্রবেশকারীদের সবাই কি কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দেয়? এই আপোষ কি জাতীয় নিরাপত্তাকে রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য ঝুঁকিতে ফেলার চিহ্ন?এসআইআর প্রক্রিয়াটি মূলত ভোটার তালিকাকে স্বচ্ছ করার জন্য। ২০০৩ সালের পর থেকে কোনও বড় সংশোধন হয়নি, যার ফলে তালিকায় লক্ষ লক্ষ অযোগ্য নাম ঢুকে গেছে।
ইসিআই-এর তথ্যমতে, শহরায়ণ, অভিবাসন আর নতুন ভোটার যোগের কারণে ডুপ্লিকেট এন্ট্রি বেড়েছে। বিহারে যেমন, ২০০৩-এর পর ৪.৯ কোটি ভোটার যুক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেরই নাগরিকত্বের প্রমাণ নেই। এসআইআর-এ বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও) ঘরে ঘরে গিয়ে ফর্ম বিতরণ করছেন, এবং ২০০৩-এর পর যুক্ত ভোটারদের জন্মতারিখ, জন্মস্থান আর পিতৃ-মাতৃর নামের প্রমাণ দিতে হবে। এটি নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ করবে বলে ইসিআই দাবি করছে।
কিন্তু কংগ্রেস এতে কেন এত বিরূপ? তাদের মতে, এই প্রক্রিয়া লক্ষ লক্ষ নিরীহ ভোটারকে বাদ দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু, অতি পশ্চাদপদ শ্রেণি আর অভিবাসীদের। বিহারে এসআইআর শুরুর পর প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম মুছে ফেলা হয়েছে ড্রাফট তালিকা থেকে, যা কংগ্রেসকে অভিযোগ করতে বাধ্য করেছে যে এটি রাজ্য মেশিনারি দিয়ে ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়া। এআইসিসি-র জেনারেল সেক্রেটারি জয়রাম রমেশ বলেছেন, “ভোটারদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
এটি এনআরসি-এর পিছনের দরজা।” কংগ্রেসের এমপাওয়ার্ড অ্যাকশন গ্রুপ অফ লিডার্স অ্যান্ড এক্সপার্টস (ইগল) এক বিবৃতিতে বলেছে, এসআইআর ‘ঔষধের চেয়ে রোগ বেশি’। তারা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছে, যেখানে আদালত ইসিআই-কে আধার, ভোটার আইডি আর রেশন কার্ডকে বৈধ প্রমাণ হিসেবে মেনে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।এখানেই আসে সেই বিতর্কিত অতীত। ইসিআই-এর অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুসারে, ২০০৩-এর পর এসআইআর বন্ধের পিছনে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের হুমকি ছিল।
তৎকালীন ইউপিএ সরকারের আমলে কমিশনকে বলা হয়েছিল, এমন প্রক্রিয়া চালালে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। ফলে, ২০০৪ থেকে শুধু রুটিন সংশোধন চলেছে, কোনও তীব্র পরিষ্কার নয়। বিজেপি এখন এটাকে তুলে ধরে বলছে, কংগ্রেসের এই বিরোধিতা প্রমাণ করে যে তারা অযোগ্য ভোটারদের—মৃতের নাম, ডুপ্লিকেট, স্থানান্তরিত আর বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের—সুরক্ষা দিতে চায়, কারণ তারাই তাদের ভোটব্যাঙ্ক। বিজেপি স্পোকসম্যান শেহজাদ পুনাওয়াল্লা বলেছেন, “কংগ্রেসের আপোষ জাতীয় নিরাপত্তাকে রাজনৈতিক জীবনের জন্য ঝুঁকিতে ফেলছে। তারা হেরে যাওয়ার অজুহাত খুঁজছে।”
