পটনা: বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির বিহার নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধানের একটি বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছে। শনিবার পটনায় একটি জনসভায় তিনি বলেন, “বিহারে একজনই জননায়ক, আর তিনি হলেন ভারতরত্ন কর্পূরী ঠাকুরজি। যদি কেউ তাঁকে অনুকরণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে, বিহারের জনগণ তা মেনে নেবে না।”
এই বক্তব্যে সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দিকে পরোক্ষ ইঙ্গিত। নীতীশ, যিনি নিজেকে সমাজবাদী নেতা এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করেন, তাঁর প্রতি এই মন্তব্য যেন তীক্ষ্ণ তির ছুঁড়েছে। এই বক্তব্য বিহারের নির্বাচনী ময়দানে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বিজেপি রাজ্যে পুলিশকে বেধড়ক মারধোরের ঘটনায় বিস্ফোরক কুণাল
কর্পূরী ঠাকুর, বিহারের একজন কিংবদন্তি নেতা, যিনি দুইবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য তাঁর কাজের জন্য ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি বিশেষ করে অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (ইবিসি) এবং অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
তাঁর ‘কর্পূরী ফর্মুলা’ বিহারের সামাজিক ন্যায়বিচারের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। ধর্মেন্দ্র প্রধানের বক্তব্যে তাঁকে ‘একমাত্র জননায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করা এবং অন্যদের ‘অনুকরণের ব্যর্থ চেষ্টা’র সমালোচনা বিজেপির নির্বাচনী কৌশলের একটি বড় ইঙ্গিত।
বিজেপি চাইছে কর্পূরী ঠাকুরের উত্তরাধিকারের মাধ্যমে ইবিসি এবং অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ভোটে ভাগ বসাতে, যা ঐতিহাসিকভাবে নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডির শক্ত ঘাঁটি।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে প্রধানের এই মন্তব্যে নীতীশ কুমারের দিকে ইঙ্গিত স্পষ্ট। নীতীশ নিজেকে কর্পূরী ঠাকুরের সমাজবাদী ঐতিহ্যের উত্তরসূরি হিসেবে দাবি করেন। তিনি বিহারে জাতপাত জনগণনার মাধ্যমে সংরক্ষণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, যা ইবিসি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। কিন্তু বিজেপি এই বক্তব্যের মাধ্যমে নীতীশের এই ইমেজকে চ্যালেঞ্জ করতে চাইছে।
পটনার এক জনসভায় প্রধান বলেন, “কর্পূরীজির মতো নিঃস্বার্থ নেতা আর হয় না। তিনি জনগণের জন্য জীবন দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ কেউ কেউ তাঁর নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করছেন। বিহারের জনগণ তা বুঝতে পারে।” এই বক্তব্যে নীতীশের জাতপাত জনগণনা এবং সংরক্ষণ নীতিকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থ’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।


