কলকাতা: হুগলি জেলার ডানকুনি শহর আবারও রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে। শনিবার সকালে ডানকুনি পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে এক ৬০ বছর বয়সী মহিলার হৃদরোগে মৃত্যুর পর, SIR (System for Identification and Re-verification) ইস্যু ঘিরে নতুন করে বিস্ফোরণ ঘটালেন তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। তাঁর অভিযোগ এই মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে বিজেপির তৈরি ভয়ের রাজনীতি, যা রাজ্যের সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলছে।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাত থেকেই। পরিবারের দাবি, গত কয়েকদিন ধরে ওই বৃদ্ধা ঘুমোতে পারছিলেন না। SIR প্রক্রিয়ায় তাঁর নাম বাদ পড়ে যাবে, তাঁর পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এই আশঙ্কায় তিনি ক্রমশ ভেঙে পড়েছিলেন মানসিকভাবে। শনিবার সকালে হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। পরিবারের লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলেও, চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিমানবন্দরের কাছে কলেজছাত্রীকে অপহরণ করে গণধর্ষণ!
এই ঘটনার পরেই সরব হন তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। নিজের এক্স (X) হ্যান্ডেলে তিনি তীব্র আক্রমণ শানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। কুনালের ভাষায়, “তুমি আজ হাসছো, মোদীজি? এটাই তো তোমার লক্ষ্য ছিল বাংলার সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরানো, ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া শুধু এই কারণে যে তারা বিজেপিকে ভোট দেয়নি! অমিত শাহ নিজেই বলেছেন SIR হল সেরা অস্ত্র, যার মাধ্যমে অনুগত নয় এমন ভোটারদের শনাক্ত, মুছে দেওয়া, আর দেশ থেকে তাড়ানো সম্ভব। আজ সেই বিষই কাজ করছে।”
কুনাল ঘোষের অভিযোগ, বিজেপি “ভোট ব্যাংক রাজনীতি”কে কেন্দ্র করে রাজ্যে এক ধরণের মানসিক সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে। SIR ইস্যুর মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের নাগরিকত্ব, ঠিকানা ও পরিচয় নিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। তাঁর দাবি, “এটা প্রশাসনিক উদ্যোগ নয়, এটা রাজনৈতিক অস্ত্র। আর সেই ভয়েই আজ একজন নিরীহ মহিলা প্রাণ হারালেন।”
বিজেপির রাজ্য নেতারা অবশ্য এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “তৃণমূল নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে কেন্দ্রকে দোষারোপ করছে। SIR হচ্ছে নাগরিক সুরক্ষা ও তথ্য যাচাইয়ের একটি প্রশাসনিক উদ্যোগ। কেউ যদি ভয়ে মারা যায়, সেটা সরকারের নয়, তৃণমূলের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের ফল।”
তবে ডানকুনির স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এলাকায় সত্যিই একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কেউ বলছেন, “প্রতিদিনই নতুন খবর আসছে, কার নাম বাদ পড়ছে, কাকে নোটিশ আসছে, কে আটক হচ্ছে। আমাদের ঘুম নেই।” এই আতঙ্কের মধ্যেই বৃদ্ধার মৃত্যু যেন নতুন করে মানুষের মনে প্রশ্ন তুলেছে SIR কি প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নাকি রাজনৈতিক আতঙ্কের অস্ত্র?
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এমন সংবেদনশীল ইস্যুতে তৃণমূল বনাম বিজেপির লড়াই আরও তীব্র হতে পারে। তৃণমূল ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে SIR বিরোধী প্রচার শুরু করেছে, অন্যদিকে বিজেপি বলছে, “যারা বেআইনি নাগরিকত্বের সুবিধা পেয়েছে, তারাই এখন ভয় পাচ্ছে।”
ডানকুনির এই মৃত্যু যেন এক গভীর প্রশ্ন রেখে গেল নাগরিক পরিচয় যাচাইয়ের নামে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করা কি সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত? এক বৃদ্ধার মৃত্যু এখন বাংলার রাজনীতিতে ‘মানবিকতার পরীক্ষা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


