নিজেদের ডিজিটাল উপস্থিতি বাড়াতে এবং সমাজ বদলের বার্তা আরও সুসংগঠিতভাবে পৌঁছে দিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে কর্মী নিয়োগের পথে হেঁটেছে সিপিআইএম (CPIM)। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এই ঘোষণা করেছেন। তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে যেমন দলীয় সমর্থকরা সাধুবাদ জানিয়েছেন, তেমনই সমালোচকরাও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।
কী ধরনের নিয়োগ?
মহম্মদ সেলিমের পোস্টে বলা হয়েছে, সৃজনশীল চিন্তাভাবনায় দক্ষ ব্যক্তিদের প্রয়োজন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাজনৈতিক ইন্টার্ন, গণজ্ঞাপনে দক্ষ কন্টেন্ট রাইটার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে নিয়োগ করা হবে। এই পোস্টে সিপিআইএম-এর নাম উল্লেখ না থাকলেও পোস্টের ভাষা এবং প্রসঙ্গ থেকে স্পষ্ট, এটি সিপিআইএম-এর পক্ষ থেকেই করা হয়েছে।
এই নিয়োগ বিজ্ঞাপনের মুল স্লোগান, “আমরা নিয়োগ করছি, সমাজ বদলাতে তোমাদের দক্ষতা চাই”। এর মাধ্যমে একদিকে সমাজের সৃজনশীল তরুণ প্রজন্মকে দলমুখী করতে চাওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে সিপিআইএম-এর কাজের গতি বাড়ানোর জন্য দক্ষ জনবল খোঁজা হচ্ছে।
সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে দলীয় সমর্থকদের একাংশ এই পদক্ষেপকে যুগোপযোগী বলে অভিহিত করেছেন। রঙ্গলাল রায় নামের এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, “সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দলের দাবি মতো ন্যূনতম ১৮ হাজার টাকা সাম্মানিক দিতে হবে। ঘর থেকেই শুরু হোক, তবেই দাবির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।” তাঁর এই মন্তব্য একদিকে সমর্থনসূচক হলেও, অন্যদিকে বেতন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
অনেক সমর্থক বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ সিপিআইএম-এর জন্য একটি প্রয়োজনীয় পরিবর্তন। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলির ডিজিটাল উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিপিআইএম, যাকে এখনো অনেকেই একটি পুরনো ধাঁচের দল হিসেবে দেখেন, তাদের এই পদক্ষেপ আধুনিক চিন্তাধারারই প্রতিফলন।
কটাক্ষকারীদের পাল্টা জবাব
তবে সমর্থকদের সাধুবাদের মাঝেই কটাক্ষকারীদের মন্তব্য বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পার্থসারথী সিনহা লিখেছেন, “কম্পিউটার ঢুকতে না দেওয়া পার্টি, ইংরেজি তুলে দেওয়া পার্টির হাল। বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক নিতে হচ্ছে। নাগরিক সাজা পতাকাহীন সিপিআইএম।”
প্রসঙ্গত, সিপিআইএম-এর সময়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু একসময় সরকারি অফিসে ইংরেজি এবং কম্পিউটার ব্যবহার বাধার মুখে ফেলেছিলেন। সেই পুরনো নীতির সঙ্গে এখনকার ডিজিটাল যুগের এই নতুন উদ্যোগকে তুলনা করে কটাক্ষ করা হচ্ছে।
সিপিআইএম-এর চ্যালেঞ্জ
সিপিআইএম বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার সংকটের মুখোমুখি। বিশেষ করে রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের আবহে সিপিআইএম তাদের পুরনো শক্তি ফিরে পেতে বেশ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই নিয়োগের পদক্ষেপকে সেই পুনরুজ্জীবনের একটি অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
কিন্তু বড় প্রশ্ন হল, এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে দল আদৌ কি দক্ষ এবং সৃজনশীল কর্মী পেতে পারবে? এবং সেই কর্মীদের দিয়ে কীভাবে তাদের রাজনৈতিক বার্তা ও আদর্শ আরও কার্যকরভাবে জনমানসে পৌঁছানো সম্ভব হবে?
ন্যূনতম বেতন নিয়ে প্রশ্ন
মহম্মদ সেলিমের পোস্টে সরাসরি কোনো বেতন উল্লেখ করা হয়নি। তবে রঙ্গলাল রায়ের মন্তব্যে ন্যূনতম ১৮ হাজার টাকা সাম্মানিকের দাবি উঠেছে। সিপিআইএম দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক এবং কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এসেছে। তাই এই নিয়োগে সেই আদর্শ মেনে চলা হবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, যদি সিপিআইএম নিজস্ব নিয়োগে ন্যূনতম বেতন প্রদানে ব্যর্থ হয়, তবে তা দলের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে।
বিজ্ঞাপনের ভাষা এবং লক্ষ্য
সিপিআইএম-এর নিয়োগ বিজ্ঞাপনের ভাষা এবং টার্গেট গ্রুপ নিয়ে অনেকেই আলোচনা করছেন। বিজ্ঞাপনের ভাষা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যা মূলত তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণ করে। সৃজনশীলতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে, সমাজ বদলের জন্য সক্রিয় ভূমিকা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের আবেদন করতে বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিপিআইএম-এর এই পদক্ষেপ একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হতে পারে, যদি তারা সঠিকভাবে এটি প্রয়োগ করতে পারে। ডিজিটাল দুনিয়ায় কার্যকর উপস্থিতি এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে দল নিজেদের পুরনো ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
সিপিআইএম-এর এই নিয়োগ বিজ্ঞাপন একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে এই পদক্ষেপ সফল হবে কিনা তা নির্ভর করছে কার্যকর বাস্তবায়ন এবং দলের অভ্যন্তরীণ শক্তি ব্যবস্থাপনার উপর। কটাক্ষের মুখে পড়লেও, এই উদ্যোগ যদি ঠিক পথে পরিচালিত হয়, তবে তা সিপিআইএম-এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক ফল আনতে পারে।
একদিকে সমাজ বদলের ডাক, অন্যদিকে রাজনৈতিক সংকট—এই দুইয়ের মাঝে সিপিআইএম কীভাবে এই নতুন উদ্যোগকে কাজে লাগাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।