বিধানসভায় প্রবেশে নির্দেশ লঙ্ঘন! কড়া পদক্ষেপ হাইকোর্টের

contempt-case-speaker-dgp-kolkata-police-cm-assembly-entry

কলকাতা: বিধানসভার ভিতরে রাজনৈতিক ঝড় এবার পৌঁছে গেল কলকাতা হাইকোর্টের দোরগোড়ায়। বিচারপতি অমৃতা সিনহার একক বেঞ্চ মঙ্গলবার একটি অবমাননা মামলায় বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের পুলিশ মহানির্দেশক (ডিজিপি) রাজীব কুমার এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মাকে নোটিস জারি করেছেন।

Advertisements

অভিযোগকারী, যিনি নিজেকে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, দাবি করেছেন যে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ এবং প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পূর্ণ নিরাপত্তা বলয় নিয়ে বিধানসভায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা আদালতের অবমাননা বলে দাবি করে দায়ের করা মামলায় বিচারপতি নোটিস জারি করে ১২ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে উত্তর দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

   

8th Pay Commission: ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর অনুযায়ী নতুন বেতন কাঠামো প্রকাশ, জানুন বিস্তারিত

এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।অভিযোগকারীর দাবি, গত ২৫ অক্টোবর বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের দিন মুখ্যমন্ত্রীকে পূর্ণ নিরাপত্তা বলয় নিয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেছে, যা আদালতের পূর্ববর্তী নির্দেশের সরাসরি লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, “আদালতে স্পিকার এবং পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে মুখ্যমন্ত্রীকে বিধানসভায় প্রবেশের সময় নিরাপত্তা বলয় কমিয়ে আনা হবে এবং কোনো অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকবে না।

কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙে তাঁকে পুরোদস্তুর নিরাপত্তা নিয়ে ঢোকানো হয়েছে। এটা শুধু আদালতের অবমাননা নয়, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অশ্রদ্ধা।” অভিযোগকারী আরও দাবি করেছেন যে, বিধানসভা চত্বরে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িবহরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে, যা আদালতের নির্দেশের সরাসরি বিরোধী। এই মামলার পটভূমি ফিরে যায় গত সেপ্টেম্বর মাসে।

Advertisements

তখন একই অভিযোগকারী হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন, যাতে দাবি করা হয় যে বিধানসভা চত্বরে মুখ্যমন্ত্রীর অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিধানসভার স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা নীতির লঙ্ঘন। বিচারপতি সিনহা তখন স্পিকার এবং পুলিশকে নির্দেশ দেন যে, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রবেশের সময় নিরাপত্তা বলয় সীমিত রাখতে হবে এবং কোনো অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী থাকবে না।

এই নির্দেশের পর স্পিকারের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে নির্দেশ পালন করা হবে। কিন্তু ২৫ অক্টোবরের ঘটনায় সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগকারী বলেন, “এটা শুধু আমার লড়াই নয়, বিধানসভার মর্যাদা এবং আদালতের নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধার লড়াই।”

বিচারপতি সিনহা মামলা শুনে অবমাননা পিটিশন গ্রহণ করে তিন জন অভিযুক্তকে নোটিস জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, “আদালতের নির্দেশ এবং প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের অভিযোগ গুরুতর। অভিযুক্তরা ১২ নভেম্বরের মধ্যে উত্তর দাখিল করুন।”

এই নির্দেশের পর রাজ্য সরকারের আইনজীবী আদালতে সময় চেয়েছিলেন, কিন্তু বিচারপতি তা খারিজ করে দ্রুত শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন।রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর থেকে বলা হয়েছে, “আমরা আদালতের নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো লঙ্ঘন হয়নি। উত্তর দাখিল করা হবে।” পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা রাজ্যের দায়িত্ব। কিন্তু আদালতের নির্দেশ পালন করা হয়েছে।”