নয়াদিল্লি: শীতকালীন অধিবেশনকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে এবার ঐতিহাসিক প্রশাসনিক সংস্কারের পথে হাঁটছে, তার স্পষ্ট বার্তা মিলেছে নতুন বিলের ঘোষণায়। কেন্দ্র ভারতীয় সংবিধানের ১৩১তম সংশোধনী বিল আনতে চলেছে, যা পাস হলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়ের প্রশাসনে বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। বহুদিন ধরে ঝুলে থাকা কাঠামোগত সংশোধন অবশেষে বাস্তবায়নের পথে।
বর্তমানে চণ্ডীগড় প্রশাসন পাঞ্জাবের রাজ্যপালের হাতে পরিচালিত হয়। স্বাধীন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (UT) হয়েও চণ্ডীগড়ের শাসন কাঠামো অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলদের মতো নয় এই অদ্ভুত প্রশাসনিক কাঠামো বহু বছর ধরে সমালোচনার মুখে।
VI-এর এই রিচার্জ প্ল্যানে ১৯টি OTT অ্যাপ ফ্রি, সঙ্গে ১৮০ দিনের বৈধতা, রোজ ৩জিবি ডেটা
এবার কেন্দ্রের উদ্যোগে পরিস্থিতির বদল আসতে চলেছে। বিলটি পাস হলে চণ্ডীগড় সংবিধানের ২৪০ অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যার ফলে অন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মতো এখানেও নিযুক্ত হবেন স্বাধীন প্রশাসক (Administrator) রাজ্যপাল নন।
সরকারি সূত্রের দাবি, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে চণ্ডীগড়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ, দ্রুত কার্যকরী এবং লক্ষ্যনির্ভর হবে। বর্তমানে পাঞ্জাব রাজ্যপাল একই সঙ্গে পাঞ্জাব ও চণ্ডীগড়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলান, যা বহু নীতিগত সিদ্ধান্তে জটিলতা তৈরি করে। সংশোধনী বিল পাস হলে প্রশাসনিক তদারকি, দপ্তর, নীতি প্রয়োগ এবং নিরাপত্তা কাঠামো আরও কেন্দ্রীভূত ও নিয়ন্ত্রিত হবে।
কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায়ের এক আধিকারিক জানান “এই সংশোধন বিল চণ্ডীগড়ের জন্য বহু বছর ধরে প্রয়োজন ছিল। প্রশাসনিক বিভ্রান্তি দূর হলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবেন।” সরকার মনে করছে, চণ্ডীগড়কে অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যেমন লাক্ষাদ্বীপ, দমন-দিউ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কিংবা দিল্লির মতো প্রশাসনিক মডেলের মধ্যে আনলে শাসনে ধারাবাহিকতা আসবে। চণ্ডীগড়ে বছর বছর পরিবর্তিত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, নীতি প্রয়োগে জটিলতা এবং কেন্দ্র–রাজ্যের সমন্বয়জনিত সমস্যার অবসান হবে বলেই বিশ্বাস।
এই বিলের প্রস্তাবের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন শুরু হয়েছে। সমর্থকরা বলছেন এটি ‘পেন্ডিং স্ট্রাকচারাল কারেকশন’, যা দীর্ঘদিন ধরেই হওয়া উচিত ছিল। তাদের মতে, চণ্ডীগড়ে বসবাসকারী নাগরিকদের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো পাঞ্জাব রাজনীতির ওপর নির্ভরশীল থাকা অযৌক্তিক।
অন্যদিকে বিরোধীদের একটি অংশ বলছে বিলটি আনা হলে কেন্দ্র-পাঞ্জাব সম্পর্কের রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে পারে। তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন চণ্ডীগড় দীর্ঘদিন ধরে পাঞ্জাবের সাংবিধানিক উত্তরাধিকার দাবির অংশ, তাই প্রশাসনিক দূরত্ব বাড়ালে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সম্পর্ক জটিল হতে পারে। যদিও সরকারের স্পষ্ট অবস্থান এটি কোনও রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়, বরং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ।
বিলটি শীতকালীন অধিবেশনে উপস্থাপিত হলে তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ স্পষ্ট হবে। তবে সরকারি শিবির আত্মবিশ্বাসী যে বিরোধী সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও বিলটি পাস করাতে কোনও সমস্যা হবে না, কারণ এটি সরাসরি নাগরিক সুবিধা ও প্রশাসনিক সংস্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত। চণ্ডীগড়ের বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়াতেও আশাব্যঞ্জক সুর। অনেকেই বলছেন “একটা শহরের প্রশাসন আলাদাভাবে দেখা উচিত। রাজনীতির দ্বারা শাসন ব্যাহত হলে শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
