নয়াদিল্লি: প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ফের সরব কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রতারণা করছেন সাধারণ মানুষ এবং কৃষকদের। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে দেশের চাষিরা ন্যায্য দাম না পেয়ে দিশেহারা।
বুধবার দলের যোগাযোগ বিভাগীয় প্রধান জয়রাম রমেশ বলেন, “সরকার শুধু অর্থনীতির সাফল্যের গল্প বলছে, কিন্তু মাটির বাস্তবতা একেবারেই অন্যরকম। কৃষকরা তাঁদের ফসলের জন্য ন্যূনতম সমর্থনমূল্যের (MSP) নিচে দাম পাচ্ছেন, যা দেশের প্রকৃত চিত্র।”
জয়রাম রমেশ তাঁর এক্স পোস্টে লেখেন, “প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সহকর্মীরা দেশের অর্থনীতির কৃত্রিম উন্নতির ছবি আঁকছেন। কিন্তু কৃষক সমাজের সামনে যে কঠিন সত্য, সেই কঠিন সত্য থেকে তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।”
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় জল-বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করল রাজ্য প্রশাসন
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ভুট্টা, সয়াবিন, মুগ, অড়হর, তুলা ও বাজরা এই ছয়টি প্রধান ফসলের বাজারমূল্য ন্যূনতম সমর্থনমূল্যের অনেক নিচে। অর্থাৎ, সরকার যে দামে ফসল কিনবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়, সেই দামের কাছাকাছিও বাজারে কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারছেন না।
রমেশ একটি চার্টও শেয়ার করেন, যেখানে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি ফসলের ক্ষেত্রে বাজারদর ও সরকারি MSP-র মধ্যে স্পষ্ট ফারাক। উদাহরণস্বরূপ, ভুট্টার MSP যেখানে ₹২,২৫০ প্রতি কুইন্টাল, সেখানে বাজারদর প্রায় ₹১,৮০০। সয়াবিনের MSP ₹৪,৬০০ হলেও, বাজারে দাম ₹৪,০০০-এর নিচে। একই অবস্থা মুগ ডাল, তুলা ও বাজরার ক্ষেত্রেও।
কংগ্রেসের দাবি, এই বৈষম্যই প্রমাণ করে যে কৃষকদের ন্যায্য আয় এখনো সরকারের কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে, কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। রমেশ বলেন, “এ কারণেই সারা দেশের কৃষক সংগঠনগুলি MSP-র আইনি গ্যারান্টির দাবি তুলেছে। এমনকি দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও প্রকাশ্যে এই দাবিকে সমর্থন করেছিলেন।”
কংগ্রেসের মতে, সরকার যদি সত্যিই ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর কথা বলে, তবে চাষিদের আয় সুরক্ষিত করাই তার প্রথম শর্ত। কৃষকরা যদি ন্যায্য দাম না পান, তবে কোনও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিই টেকসই নয়। অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরের পাল্টা বক্তব্য, মোদী সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে যেমন কৃষক সম্মান নিধি, উন্নত সেচ ব্যবস্থা, এবং সরাসরি সহায়তা প্রকল্প। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজারে MSP কার্যকর না হওয়ায় কৃষকদের আস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ছে।
এই বিতর্কের মধ্যেই স্পষ্ট হচ্ছে, MSP এখন কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক প্রশ্নও। দেশজুড়ে কৃষক আন্দোলনের পর থেকে এই ইস্যু ক্রমশই জনজীবনের কেন্দ্রে চলে এসেছে। কংগ্রেস এই প্রশ্নটিকে আবারও সামনে এনে রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে যে “সরকারের উন্নয়নের গল্পে কৃষকের জায়গা ক্রমেই কমছে।”