‘রাজ্য-কেন্দ্র টানাপোড়েনে ভুক্তভুগি সাধারণ মানুষ!’ বিস্ফোরক শমীক

chingrighata-metro-delay-366-meters-state-centre-conflict-shamik-bhattacharya

কলকাতা: রাজ্য কেন্দ্র টানাপোড়েনে বাংলায় মেট্রোর কাজ আটকেছিল বহুবছর। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় এক এক করে মেট্রোর বিভিন্ন লাইন চালু হয়েছে এবং কমেছে অফিসযাত্রী সাধারণ মানুষের হয়রানি। কিন্তু এখনও চিঙড়িঘাটা ফ্লাইওভার সংলগ্ন মাত্র ৩৬৬ মিটার পথের অনুমতি প্রয়োজন। তবে মমতা সরকার এবং কেন্দ্রের রাজনৈতিক চাপানউতোরে এই অনুমতি এখনও অধরা।

Advertisements

তাই এই রাজনৈতিক সংঘাত এবং তার ফলে হয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানির বিরুদ্ধে সরব হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তিনি তার এক্স হ্যান্ডেল বার্তায় বলেছেন “কলকাতার মানুষ আজ একটাই কথা বলছে আমাদের দোষ কী? কেন আমাদের যাতায়াতের স্বপ্ন রাজনৈতিক স্বার্থে আটকে থাকবে?” সময়ের সঙ্গে দীর্ঘ অপেক্ষা, লম্বা ট্রাফিকজ্যাম, স্কুল–কলেজ–অফিসে দেরি মানুষের প্রতিদিনের লড়াইকে সামনে এনে তিনি সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন রাজ্যের উদ্দেশে।

   

বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিস্ফোরক ভবিষ্যৎবাণী মুখ্যমন্ত্রীর

বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, মোদী সরকারের আগে মেট্রোর অর্থ বরাদ্দ ও প্রকল্প অনুমোদনের কাজ কাগজে বেশি থাকলেও, বাস্তবে অগ্রগতি ছিল চোখে পড়ার মতো কম। কিন্তু কেন্দ্রের সক্রিয় হস্তক্ষেপে গত কয়েক বছরে মেট্রোর বেশ কিছু রুট চালু হয়েছে, বহু বছরের অচলাবস্থা ভেঙে প্রকল্পের গতি বেড়েছে। নতুন পরিকাঠামো, প্রযুক্তি, নির্মাণ সব মিলেই কাজ ছন্দে এগোতে শুরু করেছিল।

শমীক ভট্টাচার্য সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “জোকা–তারাতলা পরিষেবা চালু হয়েছে, ইস্ট–ওয়েস্ট টানেলের কাজ এগিয়েছে, নিউ গড়িয়া–রুবির বড় অংশ শেষ এটাই উন্নয়নের গতি, যখন রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে।” তবে এখন অভিযোগ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়া প্রকল্পে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাত্র ৩৬৬ মিটার পথ। আর তাতেই বিকল কলকাতার পরিবহন স্বপ্ন।

অভিযোগ উঠছে, এর অনুমতির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অজুহাত বন্ধ হচ্ছে না। কখনও অনুষ্ঠান রয়েছে, কখনও পরে দেখা যাবে, কখনও এখন নয় এরকম বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অনুমোদনের ফাইল এগোচ্ছে না বলেই অভিযোগ বিজেপির। শমীক ভট্টাচার্য সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, “মানুষের সুবিধা নয়, রাজনৈতিক হিসেবকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”

Advertisements

পূর্ব কলকাতা বিশেষত চিঙড়িঘাটা, সল্টলেক সেক্টর–ফাইভ সংলগ্ন অংশ প্রতিদিনই ভুগছে ভয়াবহ যানজটে। ব্যস্ততম অফিসপাড়া, স্কুল ও হাসপাতাল এলাকায় স্বাভাবিক ট্রাফিক দীর্ঘদিন ধরেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের দাবি, মেট্রোর পরিষেবা শুরু হলে কয়েক মিনিটে যাতায়াত সম্ভব হতো যেখানে এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

এই অবস্থায় মানুষের ক্ষোভ স্বাভাবিক এমনটাই দাবি শমীক ভট্টাচার্যের। তিনি লিখেছেন, “দিনের পর দিন ট্রাফিকে দাঁড়িয়ে থাকা, স্কুল–কলেজ–অফিসে দেরি সবকিছুরই সমাধান ছিল মেট্রো। কিন্তু সেই সমাধান রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার ফাঁদে বন্দি।”

বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে। একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার বারবার জানাচ্ছে যে প্রকল্প সম্পূর্ণ করার জন্য রাজ্যের সহযোগিতা অত্যাবশ্যক; অন্যদিকে রাজ্যের তরফে প্রতিক্রিয়া আসে না বলেই অভিযোগ। এই সংঘাতের মাঝে ক্ষতিগ্রস্ত শুধু সাধারণ নাগরিকই এমনটাই দাবি বিজেপির।

শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, মানুষ এখন স্পষ্টভাবে বুঝে গেছে কারা প্রকল্প এগিয়ে নিতে চাইছে এবং কারা আটকে দিচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “উন্নয়ন কি মানুষের অধিকার নয়? শেষের কয়েকশো মিটারের জন্য আর কত বছর অপেক্ষা করা হবে?”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শমীক ভট্টাচার্যের টুইট কেবল অভিযোগ নয় বরং আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বার্তাবাহক হিসেবে তুলে ধরা হবে “উন্নয়ন বনাম অসহযোগিতা” বিতর্ককে। এখন দেখার বিষয়, চিঙড়িঘাটা সংলগ্ন ৩৬৬ মিটারের এই অনুমতি কতদিনে মেলে আর কলকাতার মানুষ সেই দিনের অপেক্ষা আর কতদিন সহ্য করে।