মমতার ‘চা সুন্দরীর’ রহস্য ফাঁস করলেন তরুণজ্যোতি

cha-sundari-project-eviction-allegations-tarunjyoti-tiwari

কলকাতা: মমতা সরকারের নতুন প্রকল্প ‘চা সুন্দরী।’ এই প্রকল্প চা বাগানের পর্যটন শিল্পকে উন্নত করার জন্য ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এই প্রকল্পের পিছনে রয়েছে উচ্ছেদের দুরভিসন্ধি। এমনটাই অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা এবং আইনজীবী তরুণ জ্যোতি তিওয়ারি। তিনি তার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলেছেন। , “চা সুন্দরী নাম দেওয়া হলেও প্রকল্পটির কাজ হচ্ছে চা শ্রমিকদের জমি ছাড়তে বাধ্য করা। এটা কোনও উন্নয়নমূলক স্কিম নয়, বরং রিসর্ট ও ট্যুরিজম ব্যবসার জন্য জমি দখলের নতুন খেলা।”

Advertisements

তরুণজ্যোতির অভিযোগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চা-বাগানের শ্রমিকরা কোম্পানি লিজের জমিতে ঘর বেঁধে থেকেছেন, সামান্য চাষাবাদ ও পশুপালন করে জীবিকা বজায় রেখেছেন। কিন্তু সরকারের চোখ এখন সেই জমিতে। তাঁর ভাষায়, “সরকার বলছে তাদের বাড়ি নেই।

   

Motoverse 2025-এ হাজির Royal Enfield Himalayan Electric, বাড়ছে জল্পনা

এটা মিথ্যে, বাড়ি আছে, জমি আছে, জীবন আছে। এখন সেই সবটাই কেড়ে নেওয়ার ফন্দি করা হচ্ছে।” তিনি আরও দাবি করেন, চা-বাগানের ভিতরে শ্রমিকদের জমি খালি করিয়ে সেই জায়গায় পর্যটক আকর্ষণের মতো রিসর্ট, হোটেল ও ট্যুরিস্ট লজ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তরুণজ্যোতি অভিযোগ করেছেন ‘মডেল গ্রাম’ নিয়ে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নদীর ধারে ছোট আকারের আবাসন প্রকল্পে শ্রমিকদের স্থানান্তর করা হবে। এই বিষয়টিকে “ফাঁদ” বলে আখ্যা দেন তরুণজ্যোতি। তাঁর অভিযোগ, নদীভাঙনপ্রবণ এলাকায় পুনর্বাসন দিলে সামান্য বন্যাতেই ঘরবাড়ি ভেসে যাবে এবং শ্রমিকেরা আবার বাস্তুচ্যুত হবেন। ৩৯৪ স্কোয়ার ফুট আয়তনের ঘর নির্মাণকেও তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, “এটা বাড়ি না, ডিটেনশন ক্যাম্পের মতো। পরিবার বেঁচে থাকার মতো জায়গাই নেই।”

Advertisements

পাট্টা দেওয়ার কথাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তরুণজ্যোতির দাবি, শ্রমিকদের যে পাট্টা দেওয়া হচ্ছে, তার কোনও আইনি মূল্য নেই এবং তা জমির স্থায়ী মালিকানা নিশ্চিত করে না। ফলে কিছুদিন পরই তাঁদের সেই জায়গা থেকেও উচ্ছেদ করা সহজ হয়ে যাবে।

এছাড়াও অস্থায়ী কর্মীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চা-বাগান ছাড়া যাদের জীবিকার অন্য উৎস নেই, তাদের জীবনে এই প্রকল্প আরও বিপর্যয় নামাবে বলে অভিযোগ তাঁর। তাঁর কথায়, “শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য নেই এবার বাসস্থাণও কেড়ে নেওয়ার পালা। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য শ্রমিকদের উন্নয়ন নয়, বরং শ্রমিকদের জীবন সংকটে ফেলে মাটি দখল করা।” তাঁর মতে, “চা সুন্দরী” নাম হলেও এটি শ্রমিক উচ্ছেদ প্রকল্প, আর এর ফলে ঐতিহ্যবাহী চা-বাগানাঞ্চলের সামাজিক কাঠামো ধসে পড়বে।

তবে সরকারি মহল সূত্রের প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি। সরকারি নথি অনুযায়ী, প্রকল্পটির লক্ষ্য চা-বাগানের শ্রমিকদের বাসস্থানকে উন্নত করা, পর্যটন শিল্পে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও এর ফলাফল দেখেই ভবিষ্যতে সত্য-মিথ্যার বিচার করা সম্ভব হবে।

এদিকে চা-বাগান এলাকায় সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন সরকার যদি ভালো বাড়ি দেয়, তবে সুবিধা হবে; আবার অনেকেই পুরোনো এলাকা ছেড়ে যেতে অনিচ্ছুক। পরিস্থিতি যে রাজনৈতিকভাবে আরও উত্তপ্ত হবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়।