Khalistan: ‘কানাডিয়ান ইউরোপ যাও’, খালিস্তান প্রশ্রয়েই এবার ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের’ দানব গিলছে কানাডাকে?

খালিস্তানিদের বিরুদ্ধে  ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবার জাস্টিন ট্রুডো প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে ভারত। কিন্তু নয়াদিল্লির সেই আবেদনে কর্ণপাত না করে খালিস্তানকে প্রশ্রয় জুগিয়েছে কানাডা। উল্টে…

Canadians go back to Europe', Khalistan supporters shouts in procession

খালিস্তানিদের বিরুদ্ধে  ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবার জাস্টিন ট্রুডো প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে ভারত। কিন্তু নয়াদিল্লির সেই আবেদনে কর্ণপাত না করে খালিস্তানকে প্রশ্রয় জুগিয়েছে কানাডা। উল্টে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে খারাপ করতে পিছুপা হয়নি ট্রুডোর লিবারল সরকার। ভারত বিরোধিতা ও হিন্দুদের ওপর আক্রমণের পর এবার কানাডার মূল অধিবাসীদের বিরুদ্ধেই গর্জে উঠল খালিস্তানিরা। কানাডায় (Canada) হিন্দু (Hindu) ভক্তদের উপর সাম্প্রতিক খালিস্তানি হামলার ঘটনার উত্তেজনা এখনও কাটেনি। এরই মধ্যে নতুন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

মোদির কেন্দ্রে প্রেগন্যান্ট বিপুল অবিবাহিত মহিলা, সরকারি রেকর্ড ঘিরে চাঞ্চল্য বারানসীতে

   

এই ভিডিওতে এক খালিস্তানি (Khalistan) সমর্থককে কানাডাবাসীদের উদ্দেশ্যে “ইউরোপে ফিরে যাও” বলে মন্তব্য করতে শোনা গেছে। ভিডিওতে আরও দেখা যাচ্ছে, ওই ব্যক্তি নিজেকে কানাডার মালিক দাবি করছেন এবং শ্বেতাঙ্গদের “আগ্রাসী” বলে উল্লেখ করছেন। অর্থ্যাৎ খালিস্তানিরা আগামীতে কানাডার জন্য ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ (Frankenstein) হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল। 

এই ভিডিওটি, যা ইতোমধ্যেই অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে, একটি জনসমাবেশের দৃশ্য দেখায়। সেখানে খালিস্তানি পতাকা হাতে বেশ কয়েকজনকে অংশ নিতে দেখা যায়। ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তিকেও প্ররোচনামূলক ভাষায় চিৎকার করতে শোনা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি সম্প্রতি গুরু নানক জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক ‘নগর কীর্তন’-এর সময় ধারণ করা হয়েছে।

খালিস্তানি আন্দোলন একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক আন্দোলন, যা ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করে। কানাডা খালিস্তানি সমর্থকদের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডার বিভিন্ন এলাকায় খালিস্তানি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক এর আগেও খালিস্তানি ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাপূর্ণ হয়েছে। বিশেষ করে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা হয়েছে খালিস্তানি সমর্থকদের প্রতি তার নরম মনোভাবের জন্য।

নতুন এই ভিডিওতে দেখা যায়, খালিস্তানি সমর্থকরা একটি জনসমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। সেখানে এক ব্যক্তি চিৎকার করে বলছেন:

“আমরাই কানাডার মালিক। শ্বেতাঙ্গরা এই দেশের আগ্রাসী।”

তাকে আরও বলতে শোনা যায়, “তোমরা ইউরোপে ফিরে যাও।” এই বক্তব্য শুধু বিতর্ক উস্কে দেয়নি, বরং কানাডার বহুজাতিক সমাজে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করা না গেলেও মনে করা হচ্ছে, এটি গুরু নানক জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক ধর্মীয় মিছিলের সময় রেকর্ড করা হয়েছে। 

মহারাষ্ট্রে ভোট প্রচারে বাংলাদেশকে বার্তা মোদীর

এই ঘটনার কয়েক দিন আগেই কানাডায় একটি খালিস্তানি গোষ্ঠী হিন্দু ভক্তদের উপর হামলা চালায়। একাধিক প্রতিবেদন অনুসারে, হিন্দু ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের উপর শারীরিক আক্রমণ চালানো হয় এবং খালিস্তানি স্লোগান দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়।

এই হামলার পর কানাডার হিন্দু সম্প্রদায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।

কানাডার সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। শ্বেতাঙ্গদের “আগ্রাসী” এবং “ইউরোপে ফিরে যাও” বলে মন্তব্য করা কেবলই বর্ণবৈষম্যের ইঙ্গিত দেয় না, বরং কানাডার বহুজাতিক সংস্কৃতির ওপর একটি আঘাত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কানাডার মতো একটি বহুজাতিক দেশে এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেশটির সামাজিক ঐক্যে চিড় ধরাতে পারে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইতোমধ্যেই খালিস্তানি গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম নিয়ে ভারতসহ আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে রয়েছেন। এই নতুন ঘটনা তার প্রশাসনের জন্য আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গুরু নানক জয়ন্তী শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পালিত একটি পবিত্র অনুষ্ঠান। তবে খালিস্তানি গোষ্ঠীগুলো এই ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম যুক্ত করার জন্য প্রায়ই সমালোচিত হয়ে থাকে।

নাবালিকা স্ত্রীয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, নিগ্রহ হিসেবে মান্যতা দিল হাইকোর্ট

এই নগর কীর্তনের সময় খালিস্তানি পতাকা দেখা গেছে, যা স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পবিত্রতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন অনেকেই।

কানাডায় হিন্দু এবং শিখ সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে সহাবস্থান করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খালিস্তানি আন্দোলনের প্রভাবে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খালিস্তানি গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ড শুধু ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই নয়, বরং কানাডার স্থানীয় সম্প্রদায়েও বিভাজন তৈরি করছে।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে ভিডিওটিকে “বিদ্বেষমূলক বক্তব্য” বলে উল্লেখ করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন:

“কানাডার বহুজাতিক ঐক্যের বিরুদ্ধে এটি একটি চরম আঘাত। প্রশাসন যেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়।”

অন্য একজন বলেন:

“ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে এমন রাজনৈতিক বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য।”

কানাডার সরকার এই ধরনের ঘটনা কীভাবে মোকাবিলা করবে তা এখন বড় প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রশাসন ইতোমধ্যেই খালিস্তানি আন্দোলনের প্রতি নরম মনোভাবের জন্য সমালোচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা কানাডার বহুজাতিক নীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদি প্রশাসন সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে এটি দেশটির সামাজিক ঐক্যকে বিপন্ন করতে পারে।

কানাডার মতো একটি দেশ, যা বহুজাতিক ঐতিহ্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত, সেখানে এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ড চরম উদ্বেগের বিষয়। খালিস্তানি আন্দোলন এবং এর প্রভাব কেবল ভারত-কানাডা সম্পর্ককেই নয়, বরং কানাডার অভ্যন্তরীণ সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করছে।