২০১৬ সালে নিযুক্ত ৩২ হাজার প্রাইমারি শিক্ষক শিক্ষিকার চাকরি বাতিল করে দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Calcutta High Court 32000 TET Jobs)। আজ বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ এই ৩২০০০ শিক্ষক শিক্ষিকার চাকরি বহাল রেখেছে। এবং বলেছে এই নিয়োগে কোনও দুর্নীতি নেই। তবে এই রায়ে খুশি নয় বিরোধী শিবির।
আইনজীবী এবং বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি তার এক্স হ্যান্ডেলে এই ইস্যুতে সরব হয়ে লিখেছেন এই রায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা পেল। তরুণজ্যোতির কথায়, “আজকের রায়ের পরে পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার বেকার যুবকের মনে নতুন প্রশ্ন উঠবে। যারা প্রকৃত যোগ্য হয়েও চাকরি পায়নি, তাদের পরিবারের কি কোনও মূল্য নেই? মানবিকতা আর বিচার এক জিনিস নয় সরকার সেই পার্থক্যটাই আড়াল করছে।”
আর বাধ্যতামূলক নয় সঞ্চার সাথী! সংসদে বিতর্কের মাঝেই নির্দেশ প্রত্যাহার কেন্দ্রের
২০১৬ সালের প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে মামলা প্রথমে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে শুনানি হয়। তিনি প্রায় ৩২ হাজার নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারই পুনর্বিবেচনায় ডিভিশন বেঞ্চ জানায় “কর্তৃপক্ষের ভুল বা দুর্নীতির দায় নিরীহ চাকরিপ্রাপ্তদের ওপর চাপানো যায় না। ৯ বছর পর চাকরি বাতিল করলে পরিবারগুলোর মাথায় আঘাত নেমে আসবে এটা মানবিক দিক থেকে সমর্থনযোগ্য নয়।”
তবে বেঞ্চ এটাও স্পষ্ট করেছে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত চলবে আগের মতোই। রিজার্ভেশন সহ অন্যান্য অনিয়ম নিয়ে যে মামলাগুলি সিঙ্গেল বেঞ্চে চলছে, সেগুলো চলবে। অর্থাৎ চাকরি বহাল থাকলেও, বিচার এখনো শেষ নয়। এদিকে, তরুণজ্যোতি তিওয়ারির বক্তব্য “সুপ্রিম কোর্টের অসংখ্য রায়ে দেখা গেছে দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগ বাতিলের নীতি খুব স্পষ্ট। ত্রিপুরা চাকরি বাতিল মামলা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক এসএসসি মামলাও তাই বলেছে। আজকের রায়ে সেই বিচারিক ধারাকে মানা হয়নি।”
তিনি আরও বলেন “আদালতের রায় মান্য। কিন্তু লড়াই থামবে না। শেষ কথা সুপ্রিম কোর্ট বলবে। এই লড়াই কারও ব্যক্তিগত নয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে।” বিরোধীদের মতে, চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের মানবিক দিক বিচার করা ঠিক হলেও, যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের কথা বিচার করা হয়নি। বিশেষ করে যাদের উত্তরপত্রে হেরফের, ওএমআর ঘষামাজা, বেআইনি ইন্টারভিউ স্কোর—এমন অভিযোগের প্রমাণ আদালতেই জমা রয়েছে বলে দাবি বিরোধী নেতৃত্বের।
অন্যদিকে রাজ্য সরকার এই রায়কে “বিচারের জয় ও মানুষের জয়” বলে ব্যাখ্যা করেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন “বিচার ব্যবস্থা আবার দেখিয়ে দিল তৃণমূল সরকার যোগ্যদের চাকরি দিয়েছে। বিরোধীদের মিথ্যে প্রচার ভেসে গেল।” যদিও শিক্ষক–আন্দোলনকারী ও বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ।
তাদের কথায়, “চাকরি বাঁচালেই দুর্নীতি মুছে যায় না। যারা অন্যায়ভাবে বঞ্চিত, তাদের ন্যায় কে দেবে?” ডিভিশন বেঞ্চের রায় ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম। এই মামলা এখন নিশ্চিতভাবেই সুপ্রিম কোর্টে যাবে আর সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা-ই এখন সবার নজর।

