কলকাতা: রাজনীতি এবং তার সঙ্গে ধর্মীয় উস্কানি। সবমিলিয়ে বঙ্গ রাজনীতির ময়দান জমজমাট (Bratya Basu on Gita recital Bengal politics)। এক দিকে যেমন হুমায়ুন কবিরের বাবরি মসজিদের শিলান্যাস আবার অন্য দিকে তেমনই বহরমপুরে রাম মন্দিরের শিলান্যাস। আগামীকাল আবার ব্রিগেড ময়দানে গীতা পাঠের অনুষ্ঠান হতে চলেছে। এই আবহেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
তিনি বলেন লোকসভা নির্বাচনের আগেও গীতাপাঠ করেছিল বিজেপি কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। এবারেও হবে না। তিনি বলেন কোনও ধর্ম গ্রন্থই বিজেপির তরুণী তীরে ভেড়াতে পারবে না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ব্রাত্য বসু বলেন “গীতা পাঠ, কোরান পাঠ, বাইবেল পাঠ সব আমরা স্বাগত জানাই। ধর্মগ্রন্থ নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।
কিন্তু যদি এগুলো নির্বাচনের আগে ভোট টানার উদ্দেশ্যে করা হয়, তাহলে এর কোনও ফল হবে না। কোনও ধর্মগ্রন্থই বিজেপিকে তরুণী তীরে ভেড়াতে পারবে না।” লোকসভা নির্বাচনের আগেও গীতাপাঠ করে বিজেপি রাজ্যে ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য “লোকসভা ভোটের আগেও গীতা পাঠ হয়েছিল, কিন্তু ফল কী হয়েছিল?
বাংলার মানুষ কোনও বিভাজনের রাজনীতি নেয় না। এবারেও হবে না।” পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ময়দান বরাবরই তীব্র আবেগে ভরা। কিন্তু সম্প্রতি একাধিক ঘটনায় ধর্মের ব্যবহার আবার সামনে এসেছে। বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের শিলান্যাস নিয়ে বিশাল বিতর্ক। তার জেরে উস্কানিমূলক স্লোগান, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, দলবদলের জল্পনা সবই চলছে।
গেরুয়া শিবির এবার পালটা শক্তি প্রমাণ করতে বহরমপুরে রাম মন্দিরের শিলান্যাস করেছে। এর মধ্যেই কলকাতার ব্রিগেডে গীতা পাঠের আয়োজন রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই আবহে তৃণমূলের ভেতরে–বাইরে হালকা চাপানউতোর থাকলেও ব্রাত্যর বক্তব্য দলীয় অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করল ধর্ম ব্যক্তিগত, রাজনীতি হওয়া উচিত মানুষের অধিকার, উন্নয়ন এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে।
ব্রাত্য বসু শুধু মন্ত্রী নন সংস্কৃতি ও মতাদর্শের দিক দিয়ে তৃণমূলের অন্যতম মুখ। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট বার্তা ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করলে ব্যুমেরাং হতে পারে। বিজেপির ধর্মীয় প্রচার আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে দেখা হচ্ছে। তৃণমূল নিজেকে সাংবিধানিক ও ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানে দৃঢ় করতে চাইছে।
বিগত লোকসভা ভোটে বিজেপি বাংলায় উল্লেখযোগ্য ফল করলেও তৃণমূলের মতে তা ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং কেন্দ্র-বিরোধী রাজনৈতিক আবহে। তাই এবার ধর্মীয় আবেগ দিয়ে ভোট টানার চেষ্টা ব্যর্থ হবে এই বার্তাই দিতে চাইছেন ব্রাত্য বসু।
যদিও আয়োজকেরা দাবি করছেন এটি পুরোপুরি ধর্মীয়–সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তবু ব্রিগেডের মতো রাজনীতির প্রতীকী একটি স্থানে গীতা পাঠ হওয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে ভোটের আগে ধর্মকে সামনে রাখা বিজেপির চেনা কৌশল। তৃণমূল তাই আগে থেকেই এর বিরুদ্ধে পালটা বার্তা দিতে চাইছে বাংলায় ধর্মীয় বিভাজন নয়, উন্নয়নই হবে নির্বাচন নির্ধারক।
ব্রাত্য বসুর বক্তব্যে স্পষ্ট যে তৃণমূল কোনওভাবেই ধর্মীয় মেরুকরণকে ভোটের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দিতে নারাজ। তাঁর মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং নাগরিক সমাজের প্রতি একটি বার্তাও ধর্মীয় গ্রন্থের শ্রদ্ধা আর রাজনৈতিক স্বার্থ এক নয়। আগামী দিনে গীতা পাঠ রাজনৈতিক চিত্র পাল্টাবে কি না, তা সময় বলবে। তবে ব্রাত্যের কড়া মন্তব্যে রাজনীতির উত্তাপ আরও কিছুটা বেড়েছে, সেটা বলাই যায়।
