বনগাঁ, ৩ ডিসেম্বর: আবারও গরুপাচার মামলাকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি (Bongaon BJP leader cattle smuggling )। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ শহর আজ সকাল থেকেই সরগরম রাজনৈতিক অন্দরে। বহুদিনের পুরনো এক মামলায় বিজেপি নেতা পরিচিত পরিতোষ মহলদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর এতেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। একদিকে বিজেপির গ্রাসরুট কর্মীরা হতবাক, অন্যদিকে তৃণমূল শিবির দাবি করছে “সত্যিই তো শেষ পর্যন্ত আইন তার নিজের পথে চলল!”
জানা গেছে, ২০১৭ সালের একটি গরুপাচার মামলার তদন্তের সূত্র ধরেই এই গ্রেফতারি। পুলিশ সূত্রের খবর, তখন সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে বড়সড় চক্রের মাধ্যমে গরু পাচার হত। সেই সময়েই পরিতোষ মহলদারের নাম ওঠে তদন্তকারীদের সন্দেহের তালিকায়। দীর্ঘ দিন ধরে মামলাটি স্থগিত থাকলেও সম্প্রতি তদন্ত আবার সক্রিয় হয়, আর তারপরই বুধবার সকালে তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে আটক করে বনগাঁ থানার পুলিশ।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য ফের খারাপ খবর নিয়ে এলেন যোগী
আজ দুপুরে পরিতোষ মহলদারকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হয়। আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। সূত্র অনুযায়ী, তাঁর সঙ্গে আরও কোন কোন ব্যক্তির যোগাযোগ ছিল এবং পাচারচক্রের নেপথ্যে আর কারা রয়েছে এসব জানতে চাইছে তদন্তকারী সংস্থা।
যদিও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছে, এটি “স্পষ্টত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ।” দলের স্থানীয় নেতারা বলেন, “বনগাঁয় বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি ক্রমেই বাড়ছে। তৃণমূল সরকার ভয় পাচ্ছে বলেই পুলিশের হাত ব্যবহার করে বিরোধীদের টার্গেট করা হচ্ছে।” অন্যদিকে তৃণমূল শিবির এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, “আইন তার নিজের মতো কাজ করছে। বিজেপি নেতার নাম মামলায় ছিল আগেই, আদালতের নির্দেশেই তদন্ত হচ্ছে। গরুপাচার নিয়ে বিজেপি এতদিন বড় বড় বক্তব্য দিয়েছে এখন নিজেদের ঘর থেকেই নাম বেরোচ্ছে!”
গরুপাচার মামলাটি নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে এই ইস্যুতে রাজ্যজুড়ে তোলপাড় হয়েছে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক অন্দরমহল। সীমান্ত লাগোয়া জেলা হওয়ার কারণে বনগাঁয় পাচারচক্র বহুদিন ধরেই সক্রিয় ছিল। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-ও নানা সময়ে একাধিক অভিযান চালিয়েছে। এর আগে তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল একই মামলায়। এবার বিজেপির এক নেতার নাম উঠে আসায় রাজনৈতিক সমীকরণ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
আবার উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই মামলাটি বর্তমানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ED ও CBI-র নজরেও রয়েছে। ফলে পরিতোষ মহলদারের গ্রেফতারি ঘটনাটি কেবল স্থানীয় রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না এটি জাতীয় স্তরের তদন্তের অংশ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক দুনিয়া। বনগাঁ শহরে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। অনেকের মতে, “গরুপাচার কে করেছে সে বিজেপি না তৃণমূল তা মুখ্য কথা নয়। দোষী যে-ই হোক, শাস্তি হওয়া উচিত।”
আরেক অংশের বক্তব্য, “প্রতিটা গ্রেফতারির পিছনে রাজনীতি আছে। নির্বাচন এগোতে থাকলে এমন আরও ঘটনা ঘটবে।” সব মিলিয়ে, পরিতোষ মহলদারের গ্রেফতার রাজ্য রাজনীতিকে আরও একবার আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। তদন্তে কী বেরোবে, তিনি আদৌ দোষী কিনা—তা সময়ই বলবে, তবে রাজনৈতিক উত্তাপ যে আরও বাড়বে, তা নিশ্চিত।
