রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি সংগঠিত ‘এসআইআর’ আবহে বিএলও-দের মৃত্যুর খবর সমাজে গভীর শোক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই কর্মীরা ভোটার তালিকা যাচাই, ভোটার তথ্য সংগ্রহ ও নির্বাচনী কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। তাদের মৃত্যু শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং প্রশাসনিক ও নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্যও একটি বড় আঘাত। এই প্রেক্ষাপটে মৃত বিএলও-দের পরিবারদের পাশে দাঁড়াতে সিইও অফিসের বাইরে বিক্ষোভে নামেন ‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’-র সদস্যরা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কমিটির সদস্যরা জানান, “আমরা আমাদের সহকর্মীদের পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক সহায়তা এবং সামাজিক নিরাপত্তা দিতে চাই। তারা প্রশাসনের অবহেলায় মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের পরিবারের জীবন-জীবিকা এবং সন্তানদের শিক্ষার নিশ্চয়তা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।” কমিটির সদস্যরা বিক্ষোভে বসে ধর্না দিয়েছেন এবং ঘনিষ্ঠ প্রশাসনিক পদাধিকারিদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের চেষ্টা করছেন। সিইও অফিসের বাইরে ধর্নার সময় কমিটির নেতারা বলেন, “বিএলওরা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাই তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা চাই প্রশাসন তাদের পাশে দাঁড়াক এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।” বিক্ষোভকারীরা একই সঙ্গে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তরের নজর কাড়ার জন্য বিভিন্ন স্লোগান ও প্ল্যাকার্ডও ব্যবহার করেছেন।
মঙ্গলবারের বিক্ষোভে দেখা গেছে যে মৃত বিএলও-দের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, “আমাদের স্বজনরা ভোটের সময়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এখন আমরা নিজেদের এবং সন্তানদের জীবন যাপনের জন্য নিরাপত্তা চাই। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।” এই ধরনের আর্থিক সহায়তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’-র নেতারা আরও বলেন, “এই আন্দোলন একটি সামাজিক ও নৈতিক দাবি। আমরা চাই, রাজ্যের নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সকল কর্মীর জন্য একটি স্থায়ী নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হোক। যারা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের পরিবার যেন আর্থিক বা সামাজিকভাবে অবহেলায় না পড়ে।”
এই বিক্ষোভ শুধু আর্থিক সহায়তার দাবিতেই সীমাবদ্ধ নয়। কমিটির সদস্যরা চাইছেন মৃত কর্মীদের পরিবারের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা, নিরাপদ জীবনযাত্রার ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ভাগ্য এড়ানোর জন্য কার্যকর নীতি গ্রহণ। তারা মনে করেন, যদি প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে অন্য কর্মীরাও অনিশ্চয়তা ও ভয়ের মধ্যে কাজ করবেন।
প্রশাসনিক পর্যায়ে এই বিক্ষোভ ইতিমধ্যেই প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে তারা কমিটির সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছেন। তবে বিক্ষোভকারীরা আরও বলছেন, “শুধু কথার জন্য নয়, দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন। আমাদের দাবি কার্যকরভাবে পূরণ না হলে আন্দোলন আরও বড় আকার নেবে।”
