কলকাতা ২৩ নভেম্বর: রাজ্যে নির্বাচনের আবহ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে প্রশাসনিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক চাপানউতোর। এর মাঝেই হঠাৎ সামনে আসছে একের পর এক বুথ লেভেল অফিসারের (বিএলও) মৃত্যুর ঘটনা। কর্তব্যরত অবস্থায় এক বিএলও-র রহস্যজনক আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতির ময়দান।
ঘটনার তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও, মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে একের পর এক প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল কংগ্রেস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং ভোট প্রক্রিয়ায় যুক্ত কর্মীরা। মাঠপর্যায়ে সরকারি দায়িত্ব পালনকারীদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দিন যত যাচ্ছে। এর মধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে কাছে নিজের প্রতিক্রয়া প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি তার মন্তব্যে মমতার অভিযোগ খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কানাডায় ধরা পড়ল ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড
শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপালের প্রতিক্রিয়া ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “এ ধরনের পরিস্থিতিতে হঠাৎ প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন নেই। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তা বিশদভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।
তিনি আরও বলেন আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ। তারা অবশ্যই সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা করে সঠিক সমাধান খুঁজে বের করবে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন উত্তেজনা বা দোষারোপের মধ্য দিয়ে নয়, বরং নিরপেক্ষ তদন্ত ও আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান বের হওয়া উচিত।
বিএলও-র মৃত্যুর সূত্র ধরে তৃণমূল অভিযোগ করেছে যে নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মীদের উপর কাজের চাপ এবং রাজনৈতিক চাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তার সঙ্গে বিরোধীরা বলছে তৃণমূল নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর জন্য এবং ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচানোর জন্য SIR বিরোধিতা করছে।
এই দুই বিপরীত অবস্থানের মাঝে রাজ্যপাল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি জানান, “সংবিধান আমাদের হাতে রয়েছে। সংবিধানেই রয়েছে যথেষ্ট ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’। কাজেই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি না করে, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করাই শ্রেয়।”
রাজ্যপাল আরও বলেন, তিনি রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সংলাপ সেতু হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী। “রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে আলোচনার প্রয়োজন আছে। তাঁদের মধ্যে কোনও যোগাযোগ বা সমন্বয়ে ঘাটতি থাকলে তা দূর করতেই আমি উদ্যোগ নেব,” মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, দোষারোপ বা সংঘাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা ক্ষুণ্ণ করবে। বরং প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে স্বচ্ছ যোগাযোগ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
প্রসঙ্গত ভোটার তালিকা সংশোধন, কেন্দ্র পরিদর্শন, বুথভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ এই কাজগুলো সম্পাদনের সময় বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ্যে কাজ করেন বিএলওরা। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা রাজনৈতিক সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। সেই প্রেক্ষাপটে এই মৃত্যুর ঘটনাটি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে স্বাভাবিকভাবেই।
যদিও তদন্ত কোথায় পৌঁছবে তা এখনও স্পষ্ট নয়, রাজনৈতিক চাপ এবং প্রশাসনিক দায়িত্বের ভারসাম্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজ্যপালের কথায় স্পষ্ট নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার হৃদয়, এবং সেই ভোট যেন সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, সকল পক্ষ সংযম দেখাবে এবং দায়িত্বশীল আচরণ করবে যাতে পরিস্থিতি আরও অশান্ত না হয়। ভোটের প্রচার যতই জোরদার হবে, প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব ততই বাড়বে। আর সেই প্রক্রিয়ার সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয় প্রশাসনেরই সম্মিলিত দায়িত্ব। আপাতত নজর থাকবে তদন্তে এবং সেই তদন্তের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপে।
