বেঙ্গালুরু: কর্ণাটকের একটি জাতীয় সড়কের টোল বুথে ঘটে গেল আরেকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। যে ঘটনা আবারও সামনে আনল ভারতের তথাকথিত ‘ভিআইপি কালচার’-এর নগ্ন রূপ। বিজেপি নেতা বিজুগৌড়া পাটিলের ছেলে সমর্থগৌড়া পাটিল একটি টোল বুথ কর্মীকে মারধর করেন, কারণ গাড়িতে ফাস্ট্যাগ না থাকায় কর্মীটি ৫০ টাকার টোল ফি দাবি করেছিলেন। পুরো ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে এবং ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকের কাঙ্কার জেলার কাছে, যেখানে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (NHAI) আওতাধীন টোল বুথে সমর্থগৌড়া তাঁর গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করেন। কর্মী টোল ফি চাইতেই তিনি বলেন, “জানো আমি কার ছেলে?” এরপরই শুরু হয় বাগবিতণ্ডা, যা দ্রুত মারধরে রূপ নেয়।
আত্মপ্রকাশ করল Suzuki GSX-8T ও GSX-8TT, রয়েছে ষাট দশকের রেট্রো বাইকের শোভা
টোল বুথের ম্যানেজার টিপ্পু আলন্দ সংবাদ মাধ্যমকে কে জানিয়েছেন, “আমরা কিছুই করতে পারছি না, কারণ ওরা বড় লোক। নতুন কর্মীটি জানত না বিজুগৌড়া পাটিল কে। গাড়িতে ফাস্ট্যাগ না থাকায় সে শুধু নিজের কাজটাই করছিল।”
আলন্দ আরও বলেন, “যা ঘটেছে সেটা ভুল, কিন্তু আমাদের হাতে কিছুই নেই। আমরা কোনো মামলা করিনি, কারণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব NHAI-এর।” এদিকে, এই ঘটনার পর থেকেই সমর্থগৌড়া পাটিল পলাতক। যদিও এখনো পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো এফআইআর দায়ের হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের একাংশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে সমর্থগৌড়ার গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছেন।
আরও বিতর্ক তৈরি হয়, যখন সমর্থগৌড়ার বাবা বিজেপি নেতা বিজুগৌড়া পাটিল নিজের ছেলের আচরণকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন। তিনি NDTV-কে ফোনে বলেন, “আমার ছেলে যখন বলল এই গাড়ি বিজুগৌড়ার, তখন টোল কর্মী জিজ্ঞেস করল, ‘বিজুগৌড়া কে?’ এটা খুব অপমানজনক। স্বাভাবিকভাবেই আমার ছেলে রেগে গিয়েছিল।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যে কেউ নিজের বাবার অসম্মান সহ্য করতে পারে না। স্টাফরাও খারাপ ব্যবহার করেছিল, তাই ঘটনাটা ঘটেছে। এতে এমন কী ভুল?” এই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা এবং কর্ণাটকের মন্ত্রী দিনেশ গুন্ডু রাও। তিনি NDTV-কে বলেন, “এটা স্পষ্ট ক্ষমতার অপব্যবহার। বাবা-ছেলের এই আচরণ ওদের শিক্ষার প্রতিফলন।”
এমনকি বিজেপিরই নেতা চালাভাদি নারায়ণস্বামীও এই ঘটনাকে নিন্দা করেছেন। তাঁর কথায়, “কে কোন দলের, সেটা বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। পাটিল সাহেব ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু এমন ঘটনা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।” উল্লেখ্য, বিজুগৌড়া পাটিল ২০০৮ সাল থেকে কর্ণাটকের বেলেশ্বর কেন্দ্র থেকে নির্বাচন লড়ছেন, কিন্তু কখনও জিততে পারেননি। বর্তমানে আসনটি কর্ণাটক শিল্পমন্ত্রী এমবি পাটিলের দখলে।
দেশজুড়ে টোল বুথে এমন ঘটনা নতুন নয়। প্রায়শই দেখা যায় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা টোল না দিয়ে কর্মীদের উপর আক্রমণ করছেন। যদিও দেশে FASTag বাধ্যতামূলক, তথাপি বহু ক্ষেত্রেই ‘ভিআইপি’ সংস্কৃতির দাপটে আইন অমান্য করা হচ্ছে নির্লজ্জভাবে। এই ঘটনা ফের একবার প্রশ্ন তুলেছে—ভারতের ‘ভিআইপি কালচার’ কবে শেষ হবে? আইন কি কেবল সাধারণ মানুষের জন্যই?



