গুণা (মধ্যপ্রদেশ): রাজ্য রাজনীতিতে ফের রক্তাক্ত অধ্যায়। জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে এক কৃষকের ওপর নৃশংস হামলা ও হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিজেপি নেতা মহেন্দ্র নাগর-এর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, মৃত কৃষকের দুই নাবালিকা কন্যার ওপরেও অমানবিক অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় উত্তাল মধ্যপ্রদেশের গুণা জেলার গণেশপুরা গ্রাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দুপুরে ছয় বিঘা জমি নিয়ে পুরনো বিরোধ ঘিরে এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে। নিহত কৃষকের নাম রামস্বরূপ ধাকড়। তিনি জমিতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় বিজেপি নেতা মহেন্দ্র নাগর ও তাঁর অনুগামীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাঁর ওপর চড়াও হয়। অভিযোগ, রামস্বরূপকে মারধরের পর মহেন্দ্র নাগর নিজের থার গাড়ি দিয়ে তাঁকে পিষে দেন।
আদালতে ক্ষমা চাইলেন ‘বলিউড কুইন’ কঙ্গনা!
এমন দৃশ্য দেখে রামস্বরূপের ১৭ বছরের দুই মেয়ে তনিশা ও কৃষ্ণা ছুটে এসে বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিযোগ, তখনই মহেন্দ্র নাগর ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের ওপরও হামলা চালায়, লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং কাপড় ছিঁড়ে দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় রামস্বরূপকে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে গুণা জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, মহেন্দ্র নাগর দীর্ঘদিন ধরে ছোট কৃষকদের ভয় দেখিয়ে তাঁদের জমি দখল করে আসছেন। গণেশপুরা গ্রামের অন্তত ২৫ জন কৃষক ইতিমধ্যেই তাঁর হুমকির মুখে নিজের জমি নামমাত্র দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। মৃত রামস্বরূপ এই দাদাগিরির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, আর তাই তাঁকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। SDOP বিবেক অষ্টানা জানান, “দুই পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ থেকেই এই সংঘর্ষ। আমরা মহেন্দ্র নাগর, তাঁর পরিবারের তিনজন মহিলা ও আরও ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।” তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তদের ধরতে একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
ঘটনার নিন্দা করেছেন বামহোরি বিধায়ক ঋষি আগরওয়াল। তিনি বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের দায় সরাসরি বিজেপি সরকারের। রাজ্যে তাঁদের নেতাদের দাপটে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।” তিনি দাবি করেন, “অভিযুক্ত মহেন্দ্র নাগরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে, না হলে কংগ্রেস আন্দোলনে নামবে।”
অন্যদিকে, স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে। তবে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে গেছে, কারণ এটি কোনও সাধারণ অপরাধ নয় এটি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব ও গ্রামীণ আতঙ্কের এক ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি। রামস্বরূপ ধাকড়ের বিধবা স্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমার স্বামী শুধু নিজের জমি বাঁচাতে চেয়েছিলেন। ওরা দিনের আলোয় ওকে মেরে ফেলল। আমি আমার স্বামীর জন্য বিচার চাই।”
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মহেন্দ্র নাগর এর আগেও একাধিক জমি দখল ও হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি রেহাই পেয়েছেন। এখন গোটা গুণা জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ওপর চাপ বাড়ছে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, সেটাই দেখার।


